পিআরআই’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা
প্রবৃদ্ধি কম হলেও ডাল-ভাতের সমস্যা হবে না

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চাঁদাবাজি ব্যাপক হচ্ছে। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে একটি ট্রাক ঢাকায় আসতে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। কাওরান বাজারেও স্থান ভেদে নানারকম চাঁদা আছে। আমি ডিমের বাজারে গিয়ে দেখি সব দোকান বন্ধ। বলে যে, মুরগি ডিম পারে কম ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে তারা দোকান বন্ধ করে পালিয়েছে। একই অবস্থা সয়াবিন তেলের বাজারেও। রাজনৈতিক সরকার ছাড়া ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট কেউ ভাঙতে পারবে না। কেননা রাজনৈতিক সরকার হলে তাদের লোকজন কমিশনারসহ বিভিন্ন জায়গায় থাকে। তারা ধমক দিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমাতে পারে। আমার আর ইউনূস সাহেবের তো কোনো লোকজন নেই। পারলে ব্যবসায়ীরা আমাদেরই উলটো ধমকায়। সোমবার পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটে (পিআরআই) ‘উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন দৃশ্যপট আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বনানীতে পিআরআই সম্মেলন কক্ষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. জাঈদী সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান। আরও বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ এমএ আকাশ, বইটির লেখক আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরের সাবেক উপদেষ্টা ড. রেজওয়ানুল ইসলাম, বাতিঘর প্রকাশনীর প্রোপ্রাইটর দীপঙ্কর দাস প্রমুখ।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি হবে না। তবে এতে আপনারা ঘাবড়াবেন না। ভাত ও ডালের অভাব হবে না। আমরা আমদানি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, খাদে পড়ে যাওয়া অর্থনীতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। ভালোর দিকে রওয়ানা দিতে একটু সময় লাগবে। অর্থনীতিতে এখনো অভ্যন্তরীণ অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। আমি সব জায়গা ঠিক করতে পারব না। ব্যাংকের খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য সমস্যা, পুঁজিবাজার, রাজস্ব বোর্ড ঠিক করার চেষ্টা চলছে। আমরা এসব ক্ষেত্রে একটি ফুটপ্রিন্ট (পদচিহ্ন) রেখে যেতে চাই। যাতে রাজনৈতিক সরকার এসে আমাদের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সালেহউদ্দিন আরও বলেন, এনবিআর নিয়ে একটি আলাদা আইন করা হবে। কর নীতিমালা যারা করবেন তারা রাজস্ব বোর্ডে থাকতে পারবেন না। সব কিছু আলাদা করা হবে। এমনকি এনবিআরের নামও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে একটি ম্যাসেজ অন্তত দেওয়া গেছে যে, যদি টাকা পাচার এবং দুর্নীতি করো তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হবে, বাসায় থাকতে পারবা না। এসব বন্ধ করতে হলে সমাজের সচেতনতাও প্রয়োজন। শুধু ফিসক্যাল পলিসি আর মনিটরি পলিসি দিয়ে এসব বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের একটি সুনাম আছে। কিন্তু আমরা নিজেরাই দেশটাকে টেনে নিচে নামাই। এটাই বড় সমস্যা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রেস্টুরেন্টে ভ্যাট আরোপ করলে মানুষ বলে ভাতের ওপর কর ধরেছি। সেটা বাদ দিলাম এখন বলছে রুটির ওপর কর নিচ্ছি। আবার ভ্যাট বাদ দিয়ে কর কোথায় বাড়াব? ব্যবসায়ীরা বলছেন কর বাড়িয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সব শেষ করে দিচ্ছি। তবে আমাদের দেশে মানুষ ব্যবসা করে যত দ্রুত ধনী হয় বিশ্বের আর কোথায় এটা হয় না। একদিন যারা রিকশায় চলাচল করত এখন সেই মানুষই আমার পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যায়। কথা বলে দেখলাম তার চারটি গাড়ি আছে। তারপরও কর দিতে চায় না।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে পুরোনো চ্যালেঞ্জগুলো আছেই। এর পাশাপাশি নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। ফলে শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে বা সুদের হার বাড়িয়ে দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য বহু হাতিয়ার ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে গোঁড়ামি পরিহার করে বিভিন্ন ধরনের নীতিমালার সমন্বিত প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে।