প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় যা বললেন ডিসিরা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম

জেলা প্রশাসকরা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন না। তাদের ভেতরে একধরনের ভীতি বিরাজ করছে। তারা যে কোনো সময় আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন-এমন আশঙ্কা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আপ টু দ্য মার্ক হচ্ছে না।
রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে জেলা প্রশাসকরা এসব বলেন। তারা ভাঙা সড়ক মেরামত, জলাবদ্ধতা, নদী খনন, শিক্ষকের অভাব এবং চিকিৎসক সংকটের বিষয় তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার সামনে।
তিনদিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথমদিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জেলা প্রশাসকরা। এ সময় তারা বেকারত্ব নিরসন, মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা, নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সহায়তা বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমির বিধিবহিভর্‚ত দখল প্রতিরোধ এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তার বিষয়েও তারা বক্তব্য দেন। উদ্বোধনের পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মুক্ত আলোচনা সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
একাধিক ডিসি জেলার ব্যবহার অনুপযোগী ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট দ্রুত মেরামতের দাবি জানান। তারা বলেন, এ ধরনের রাস্তার কারণে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে নিহত ও আহত হওয়ার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। এক ডিসি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষায় অনেক স্থানে পানি ওভারফ্লো হয়। মাত্রারিক্ত জলাবদ্ধতার কারণে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মৎস্যচাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিত উন্নয়ন ও নাব্য হারিয়ে ফেলা নদী ও খাল খনন জরুরি।
তারা বলেন, জেলায় জেলায় সরকারি-বেসরকারি কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এমনিতেই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। বিগত সময় বারবার পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনের কারণে এ ধারণা তৈরি হয়। নতুন কারিকুলামে শিক্ষায় আস্থা ফিরলেও শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান জরুরি বলে তারা দাবি করেন।
দুই ডিসি বলেন, জেলার চিকিৎসাব্যবস্থা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অভাব। যেখানে ৩০ জন ডাক্তারের সংস্থান রয়েছে, সেখানে কাজ করছেন ৪/৫ জন। যেখানে ৩৫ জন নার্সের সংস্থান রয়েছে, সেখানে ৬/৭ জন নার্স কর্মরত। এত কম জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় অসুস্থ মানুষ সঠিক চিকিৎসা সেবা পান না। বিষয়টি নিরসন জরুরি।
একাধিক ডিসি বেকারত্ব এবং মাদক সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের অভাবে নানা ধরনের মাদক গ্রহণ করছে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তরুণ প্রজম্ম রক্ষা করা জরুরি।
একজন ডিসি বলেছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভ‚মি জবরদখলের ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তারা বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।