Logo
Logo
×

জাতীয়

রাজধানীতে বাসের ‘কৃত্রিম সংকট’, নগরবাসীর ভোগান্তি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫১ পিএম

রাজধানীতে বাসের ‘কৃত্রিম সংকট’, নগরবাসীর ভোগান্তি

গত দুদিনের মত বুধবারও সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস মিলছে না। মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা, বাড্ডা, বিমানবন্দর, শেওড়া ও বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে শত শত যাত্রী যানবাহনের অপেক্ষায়। 

এদিন সকালে রাজধানীর রাস্তায় বাস চলাচল খুবই কম দেখা যায়। কেউ কেউ আবার টিকেট নিয়ে বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন কাউন্টারে। কিন্তু গাড়ির দেখা নেই।

জানা গেছে, কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কয়েকটি পরিবহণ কোম্পানির বাসের চালকরা। এতে করে গাড়ি বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারও যাত্রী।

ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি বলছে, তুরাগ, অনাবিল ও এয়ারপোর্ট পরিবহণের চালকরা কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে চাইছেন না, সে কারণে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাদেরকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, দুয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি ‘ঠিক হয়ে যাবে’।

ঢাকার মালিবাগের বাসিন্দা সাজ্জাদ বলেন, রাইদা, অনাবিল এবং তুরাগের কোনো বাস সড়কে নেই। ফলে শত শত মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বাড্ডা-রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া বা ওইদিকে যেতে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এই রুটে ইকবাল বলে আরও একটা এসি কাউন্টার সার্ভিস আছে, কিন্তু সেটা সকাল ১০টার আগে কাউন্টার খোলে না। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষকে জিম্মি খুবই সহজ।

বাড্ডার বাসিন্দা রাকিব একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার অফিস উত্তরার আজমপুরে। গত দুদিন বাস না পেয়ে অফিসে যেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি। এ কারণে বুধ ও বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার অফিসে যাওয়ার সময় দুই আড়াই ঘণ্টা বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। পরে অনেক কষ্টে একটা বাস পেয়েছি। বাসায় ফেরার সময়ও একই অবস্থা। এ কারণে দুদিনের ছুটি নিয়েছি, আজ আর কাল বাসা থেকে বের হবো না।

বনানীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন রোবায়েত। তিনি আব্দুল্লাহপুরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন ৪৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে। বাস না পাওয়ায় অফিসে যেতে তার দেরি হবে বলে জানিয়েছেন।

ঢাকার গণপরিবহণ নিয়ে করা ফেসবুক পেজ ট্রাফিক অ্যালার্ট-এ বিষয়টি নিয়ে নানা পোস্ট দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

ফাহিম ফেরদাউস নামে একজন লিখেছেন, ‘বিশাল লম্বা লাইন ফার্মগেট থেকে বনানী যাওয়ার। কিন্তু বাস চলে একটা ‘এয়ারপোর্ট পরিবহণ’। পরিবহণ সংকট এখন ভয়াবহ। রাস্তায় গাড়ির জন্য জ্যাম ব্যাপক, কিন্তু সময় মতন গাড়ি পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বনানী যাওয়া আসা যারা করেন, তারাই জানেন এখন ভোগান্তি কোন পর্যায়ে।’

সাফায়েত মাহমুদ নামে একজন লিখেছেন, ‘বাসের জন্য আরও কষ্ট করতে রাজি আছি। কিন্তু যারা এখন বাস বন্ধ করে রেখেছে তাদের লাইসেন্স বাদ দিয়ে সরকার নিজেদের গাড়ি নামাক।’

ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম জানান, ‘কয়েকটি পরিবহণের চালকরা কাউন্টারে বাস চালাতে চাচ্ছেন না। এতে কয়েকটি সড়কে বাস কম চলছে। শুরুতে আপত্তি জানালেও ইকবাল, বলাকা পরিবহনের বাস চলাচল শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, চুক্তিতে গাড়ি চালিয়ে বেশি লাভ করত এমন চালকরা এই বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। তাদের ‘বোঝানোর’ চেষ্টা করা হচ্ছে।

‘বলাকার গাড়ি চলছে, রাইদার কিছু গাড়িও চলা শুরু করেছে। চালকদের মধ্যে দুইটা গ্রুপ আছে তাদের ডাকছি ওইটা ঠিক করে দিব আজকে। বিমানবন্দর পরিবহণ মঙ্গলবার লোকাল করেছিল। মালিকদের পরে প্রেশার দেওয়া হইছে যেন কাউন্টারে চালায়। এটা ঠিক হইতে দুয়েকটা দিন লাগবে আরও।’

সাইফুল আলম বলেন, ‘পয়সাকড়ি অন্যায়ভাবে ইনকাম করে যদি অভ্যাস হয়ে যায়, তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। তারা এখন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালাত, মালিককে ২০০০ টাকা জমা দেয়। তারা ইনকাম করত ৫-৬ হাজার টাকা। এখন ন্যায্য বেতন নিলে হয়ত ২ হাজার পাবে। এই একটা বিষয় আছে। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, লাগলে বেতন আরও বাড়িয়ে দেব। পাশাপাশি তাদেরকে ইন্ধনও দিচ্ছে কেউ কেউ।’

ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে গাজীপুরের যেসব বাস চলে, সেগুলোর কাউন্টার পদ্ধতির পরিষেবা শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার।

গোলাপি রঙের এসব বাসের সংখ্যা দুই হাজার ৬১০টি। এতোদিন ২১টি কোম্পানির অধীনে চলা এসব বাসে শৃঙ্খলা আনতে চালু করা হয় ই-টিকেট।

এ পরিষেবা উদ্বোধন করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, ঢাকার ভঙ্গুর ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার প্রথম পদক্ষেপ এটি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো রুটে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম