ট্রাকসেলে দীর্ঘ লাইন
টিসিবির পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকেই

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৪ এএম

ফাইল ছবি
উচ্চমূল্যের বাজারে নাকাল ভোক্তা। আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেটানো বড় দায়। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ এক মাস নয় দিন পর ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। আসন্ন রমজান মাস ঘিরে ট্রাকে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডালের সঙ্গে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে। তাই কার্যক্রমের প্রথম দিনই ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন খেটে খাওয়া মানুষ। বাদ যাননি মধ্যবিত্ত ক্রেতাও। উদ্দেশ্য খাদ্য জোগানে বাড়তি ব্যয় কমানো। তবে পণ্যের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি থাকায় অনেকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন। সোমবার রাজধানীর একাধিক বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর তেজগাঁওস্থ টিসিবির
গুদাম থেকে সকাল ৮টার মধ্যে পণ্য বোঝাই ট্রাক বিক্রয় স্থানের উদ্দেশে বের হওয়ার কথা।
কিন্তু অনেক ডিলার পণ্য বোঝাই করে নির্দষ্টি সময় বের হতে পারেনি। প্রথম দিনই প্রত্যেকটি
ট্রাক ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা দেরি করে বের হয়েছে।
কাওরান বাজার টিসিবি ভবনের সামনে
গিয়ে দেখা যায় নারী ও পুরুষের আলাদা দুটি লাইন। সবাই রোদে দাঁড়িয়ে পণ্য পেতে অপেক্ষা
করছেন। যিনি পণ্য কিনতে পারছেন, তিনি হাসিমুখে বাড়ি যাচ্ছেন। সেখানে কথা হয় ভ্যানচালক
আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে জানান, টিসিবির ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়িয়েছি।
এখানে কম দামে পণ্য কেনা যায়। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ছোলা ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এখানে ছোলার কেজি ৬০ টাকা। দুই কেজি কিনতে পারব। বাজারে সয়াবিন তেল নাই বললেই চলে।
বিক্রেতারা ২০০ টাকা লিটার বিক্রি করছে। এখানে প্রতিলিটার ১০০ টাকা করে দুই লিটার বিক্রি
হচ্ছে। বাজারের ১৪০ টাকা কেজি দরে মসুর ডাল এখানে ৬০ টাকা কিনতে পারছি। একইভাবে ১৩০
টাকা কেজি চিনি ৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ৫০০ গ্রাম খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এত
কম দামে পণ্য পেয়ে আমি খুশি। তবে অনেক কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পেতে হয়েছে।
একই স্থানে কথা হয় হাবিবুল্লাহর
সঙ্গে। তিনি জানান, কম দামে পণ্য কিনতে এসেছি। তবে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও কিনতে পারিনি।
ট্রাকে বেশি পণ্য থাকলে এমন ভোগানি্ত আর পোহাতে হতো না। শুনেছি কালও তারা এখানেই
বসবে। তাই কাল আগেভাগেই এসে লাইনে দাঁড়াব। কারণ এখান থেকে পণ্য নিলে বাজারের চেয়ে অনেক
কম দামে পাওয়া যাবে।
রাজধানীর কাজীপাড়া মেট্রোরেল
স্টেশনের নিচে টিসিবির ট্রাকসেল থেকে পণ্য কিনতে এসেছিলেন আসমা বেগম। দীর্ঘ সময় লাইনে
দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য না পেয়ে বাড়ির পথ ধরেছেন। তিনি জানান, এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে
পণ্য কিনতে পারেননি। তার সিরিয়াল আসার আগেই পণ্য শেষ হয়ে গেছে। আসমা বলেন, এখানে আমার
মতো অনেকেই পণ্য না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ট্রাকে পণ্য বেশি থাকলে আমরা পণ্য পেতাম। তাই
বেশি করে পণ্য বিক্রি সরবরাহ দরকার।
টিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য
কর্মকর্তা যুগ্ম-পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রোজা উপলক্ষ্যে ভোজ্যতেল, চিনি,
মসুর ডালের সঙ্গে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর ৫০টি এবং চট্টগ্রামে ২০টি
স্থানে টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
নির্দেশে নম্নি আয়ের স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবার ভর্তুকি মূল্যে এই পণ্য কিনতে
পারবেন। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে অন্য ভোক্তারাও লাইনে দাঁড়িয়ে এই পণ্য
কিনতে পারছেন। এছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় শহর এবং নির্দষ্টি জেলায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের
মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম অতি অল্প সময়ের মধ্যে শুরু করা হবে। তবে বিক্রি কার্যক্রমের
প্রথম দিন হওয়ায় ট্রাকগুলো নির্ধারিত সময় বের হতে পারেনি। আর ট্রাকপ্রতি ২৫০টি পরিবারের
জন্য পণ্য বরাদ্দ করা হয়।
এদিকে টিসিবির পক্ষ থেকে সারা
দেশে ৫৭ লাখ স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে পাঠানো
হয়েছে। আরও ছয় লাখ কার্ড প্রিন্ট করার কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। যা চলতি মাসেই পাঠানো
হবে। আরও ১৫ লাখ কার্ড তৈরিতে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সরকার এই কার্ড ভোক্তাকে বিনামূল্যে
প্রদান করছে।