কোনো পদক্ষেপেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চাল ও তেলের বাজার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১১ এএম
ফাইল ছবি
চালের বাজার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। কোনো পদক্ষেপই নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। চিকন থেকে মোটা সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এক মাস ধরেই সব জাতের চাল কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১২ টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও কমেনি চাঁদাবাজি। হাতবদলের পরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারগুলোতে। ফলে বাড়ছে চালের দাম।
এদিকে সবজির দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কম। দাম কমায় স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই মাস আগের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে বিক্রিও।
শুক্রবার কেরানীগঞ্জের আগানগর ও জিনজিরা, রাজধানীর শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও তালতলা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কাপ্তানবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, খিলক্ষেত, রামপুরা এবং কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
চালের বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বরিশাল রাইচ এজেন্সির বিক্রেতা আল হাসিব বলেন, চালের দাম কমার বদলে উলটো বেড়ে যাচ্ছে। মিল পর্যায়ে তদারকি না বাড়ালে সামনে দাম আরও বাড়বে।
একই অবস্থা তেলের বাজারেও। দাম বাড়ানোর এক মাস পরও বাজারে কৃত্রিম সংকট কাটেনি বোতলজাত সয়াবিন তেলের। ভোক্তাদের অভিযোগ, বোতলজাত পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে। হাতে গোনা দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়েও বেশি দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। খোলা সয়াবিন তেল কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। তবুও মিলছে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
তেলের বাজারের এই অস্থিরতার কথা স্বীকার করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। আবার তেল কিনতে গেলে সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত ৯ ডিসেম্বর লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পর সম্প্রতি আবারও দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়, শালগম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, সাধারণ শিম ৩০ টাকা, আর বিচিসহ শিম ৪০ টাকা, লম্বা আকৃতির ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, খিঁড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা (হাইব্রিড) ৬০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গাজর ৪০ টাকা, ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা প্রতি কেজি এবং লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দুই সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমতির দিকে। সপ্তাহ দুই আগে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২০০-২১০ টাকা। এরপর সাত-আট দিন আগে দাম কেজিতে ১০ টাকা করে কমেছিল। আর বৃহস্পতিবার তা আরও ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকায়। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে দাম কমেছে ২০ টাকা।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি সোনালির দাম ছিল ৩০০-৩৩০ টাকা। বৃহস্পতিবার এই প্রজাতির মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩১০ টাকা দরে। সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ২০ টাকা করে কমেছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। বাজারভেদে এক ডজন ডিমের দাম রাখা হয় ১২৫-১৩০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে অবশ্য আরও ৫-১০ টাকা বেশি দাম রাখা হয়।