Logo
Logo
×

জাতীয়

ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ, চূড়ান্ত হয়নি নাম

সবার দৃষ্টি নতুন দলে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

সবার দৃষ্টি নতুন দলে

ফাইল ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিগগির নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এ দল গঠনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সবার মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের জাতীয় নাগরিক কমিটির তত্ত্বাবধানে নতুন দল গঠন করাকে সাধুবাদ জানালেও এ ব্যাপারে জাতীয় নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। এমনকি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে নতুন দল গঠিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা।

এদিকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন এ দলটি আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে-সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী জনপ্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছে জাতীয় নাগরিক কমিটির এ রাজনৈতিক দল। যার গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনি ইশতেহারেও থাকবে বৈচিত্র্য। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তারা নির্বাচনি জোটও করতে পারে। এ অবস্থায় সবার দৃষ্টি এখন নতুন এ দলের দিকে।

প্রসঙ্গত, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে টিকতে না পেরে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এর তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। প্রথম দিনই এই সরকারে উপদেষ্টা হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত হন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। পরে উপদেষ্টা হন মাহফুজ আলম। এরপর থেকেই ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা ব্যাপকতা পায়। অভ্যুত্থানের এক মাস পর সেপ্টেম্বরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। প্রায় চার মাস ধরে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন করে সংগঠনের বিস্তৃতিও ঘটিয়েছে তারা। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তৃণমূলে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হলে দলও দাঁড়িয়ে যাবে। গত কয়েকদিন থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে দল গঠনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানান দেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে দ্রুত দল গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় নেপথ্যের কারিগররা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশে যখন আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষিত হয়ে গেছে, তখন নতুন এ দলের প্রস্তুতি বাস্তবে কতটা এগিয়েছে, এই দলে কারা থাকবেন, দলের নীতি-আদর্শ কী হবে, সম্ভাব্য শীর্ষনেতাই বা কে হবেন, সেসবের দিকে এখন দৃষ্টি সবার। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবী সংগঠনের মানুষেরও দৃষ্টি এই দলের দিকে। যদিও বাংলাদেশের বাস্তবতায় গত প্রায় চার দশকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো সারা দেশে বিস্তৃত বড় কোনো রাজনৈতিক দল তৈরি হয়নি। বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল গঠিত হলেও সেগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো বড় দলে রূপান্তরিত হতে পারেনি। এছাড়া বাম-ডান, জাতীয়তাবাদী থেকে শুরু করে ইসলামপন্থি আদর্শের রাজনীতিও আগে থেকেই উপস্থিত আছে দেশটিতে। ফলে ছাত্রদের নতুন দল নিয়ে এখন সর্বত্র চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে বেরিয়ে এসে সেটা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতেই পারে। এটা তো তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সেক্ষেত্রে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু একটা কথা ইতোমধ্যে উঠে আসছে মিডিয়ায়। কিংস পার্টি বলে একটা কথা উঠছে। আমি মনে করি এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। অর্থাৎ সরকারের কোনো সাহায্য না নিয়ে তারা যদি দল গঠন করতে চায়, সেটা তাদের জন্যই ভালো হবে।’

ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক দল করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। ছাত্ররা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা নতুন দল গঠন করবে। তার মানে তাদের চিন্তা ও কর্মের মধ্যে নতুন দল গঠনের বিষয়টি আছে। আমরা তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি নিরপেক্ষ সরকারে থেকে দল গঠনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ছাত্রদের কাছ থেকে মানুষ প্রত্যাশা করে না।

এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম প্রধান শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি যুগান্তরকে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ যদি কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, আমরা অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু ক্ষমতার ছত্রছায়ায় কিংবা ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা হলে জনগণ তা ভালো চোখে দেখবে না। কেউ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে ক্ষমতার বাইরে থেকে জনগণের মধ্য থেকে করা উচিত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা যুগান্তরকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার প্রস্তুতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা দল ঘোষণা জাঁকজমকপূর্ণভাবে করতে চাই। সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাই। এই রাজনৈতিক দলে আমরা বহু নেতৃত্বের কথা ভাবছি। একক কোনো ব্যক্তিকে দীর্ঘসময় দলের শীর্ষ পদে থাকতে দেওয়া হবে না। পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও স্বীকার করে বলেছেন, ‘ছাত্ররা দল গঠন করবে। এ লক্ষ্যে তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমকে সম্প্রতি তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন এবং সেই দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বেরিয়ে যাবেন বলে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল গঠন ও পদত্যাগের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকারে থেকে কোনো রাজনৈতিক দলে থাকব না।’

উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৮টি। এছাড়া নিবন্ধন নেই এমন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অসংখ্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম