Logo
Logo
×

জাতীয়

জ্বালানি উপদেষ্টাকে চার সংগঠনের চিঠি

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ স্থগিতের দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ পিএম

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ স্থগিতের দাবি

ফাইল ছবি

গত ৫ বছরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ২৮৬ শতাংশ, বিদু্যতের ৩৩ দশমিক ৫০, ডিজেলে ৬৮ এবং ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪-১৫ শতাংশ। এছাড়া ২০২৩ সালে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে ৫৬ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে বাংলাদেশের বস্ত্র খাত।


সোমবার এ উদ্বেগের কথা জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে চিঠি দিয়েছে রপ্তানিমুখী চার বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এবং বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ)। সেখানে শিল্পের স্বার্থে দুটি সুপারিশ করেছে সংগঠনগুলো। একটি হচ্ছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত রেখে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়ন। দ্বিতীয়টি সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহের অনুমতি দেওয়া এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কেৌশল ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যেতে পারে।


বস্ত্র খাতের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে পোশাক আমদানি ৫ শতাংশ কমতে পারে। ইতোমধ্যে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষত পোশাকের রপ্তানি মূল্য কমছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারগুলোয় বাংলাদেশের পোশাকের মূল্য যথাক্রমে ৪ দশমিক ২৪ এবং ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমেছে। তার ওপর শিল্পের উত্পাদন খরচ বেড়েছে। ৫ বছরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ২৮৬ শতাংশ। বিদু্যতের ৩৩ দশমিক ৫০, ডিজেলের ৬৮ এবং ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪-১৫ শতাংশ। এছাড়া ২০২৩ সালে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে ৫৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৯ শতাংশ করা হয়েছে।

 

চিঠিতে আরও বলা হয়, জুলাই বিপ্লবের আগে ও পরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া, ব্যাংকিং সেক্টরে সংকট, শ্রম অসনে্তাষ ও সার্বিক নিরাপত্তা ইসু্যর কারণে শিল্পের উত্পাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে গ্যাসের চাপ কম থাকায় শিল্পে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের কারণে ৫০-৬০ শতাংশ হারে উত্পাদন কমে গেছে। ফলে কারখানাগুলোর উত্পাদন শিডিউল এবং সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে, লিড টাইম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং আমরা ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যখন শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তখন শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু বাস্তবে এর সুফল শিল্প পায়নি।

 

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বিশ্লেষণ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে গ্যাসের মোট সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার ৯৪৭ মিলিয়ন ঘনমিটার, যার ১৮ শতাংশ শিল্প খাতে সরবরাহ করা হয়েছে। শিল্পে ব্যবহূত মোট গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ হয় বস্ত্র খাতে। সেই হিসাবে বস্ত্রশিল্পের বার্ষিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনমিটার। যদি গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটারে ৪৫ টাকা বৃদ্ধি পায়, তবে এ খাতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা রপ্তানি আয়ের (এফওবি) প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। পাশাপাশি টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবহার করে। যার পরিমাণ বছরে প্রায় ২ হাজার ৫৯৫ মিলিয়ন ঘনমিটার। গ্যাসের দাম ৪৫ টাকা হারে বৃদ্ধি করা হলে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে বছরে প্রায় অতিরিক্ত ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা বাড়তি খরচ বহন করতে হবে, যা বার্ষিক পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাত্ এই ব্যাপক হারে খরচ বৃদ্ধি পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে।

এছাড়া চিঠিতে উলে্লখ করা হয়, সম্প্রতি বস্ত্র ও পোশাক খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে পোশাক শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতে ১৮ শতাংশ। এ অবস্থায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং চলমান মিল ও কারখানাগুলোকে সংকটে ফেলবে। এ উদ্যোগ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম