বহুত্ববাদ নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন মারুফ কামাল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে বলা হয়েছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এগুলোর মধ্যে শুধু গণতন্ত্রকে মূলনীতি হিসেবে রাখার প্রস্তাব করেছে।
এর সঙ্গে তারা সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও বহুত্ববাদকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণের সুপারিশ করেছে। এই পাঁচ মূলনীতি নিয়ে এখন বোদ্ধামহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিস্তর কাটাছেঁড়া করছেন, মূলনীতির মূলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
আর এতেই সুপারিশকৃত পাঁচ মূলনীতির মধ্যে ‘বহুত্ববাদ’ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এই মূলনীতি নিয়ে সংস্কার কমিশন আসলে কী বুঝিয়েছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণার অভাবেই বিতর্কের সূচনা।
এ প্রসঙ্গে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে ‘বহুত্ববাদ’-এর শেকড় খোঁজার চেষ্টা করেছেন সাংবাদিক ও লেখক মারুফ কামাল খান। তিনি লিখেছেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের রিপোর্টে যে পাঁচটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সুপারিশ করেছে তার একটি হচ্ছে বহুত্ববাদ। আমি এই সুপারিশ নিয়ে বা বহুত্ববাদের পক্ষে-বিপক্ষে এখনই কোনো আলোচনা করতে যাচ্ছি না। তবে এই বহুত্ববাদকে তাওহিদ বা একত্ববাদের বিপরীত এবং শির্ক-এর সমার্থক বলে কেউ কেউ মতামত দিচ্ছেন। আমার ধারণা, এই মতামত সঠিক নয় এবং এতে অহেতুক ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে।’
‘আমার জানা মতে, তাওহীদ অর্থ একত্ববাদ। ইসলামী শরিয়তে এর বিপরীত শব্দ শির্ক। শির্ক-এর বাংলা তরজমা অংশীবাদ, বহুত্ববাদ নয়। বহুত্ববাদ হচ্ছে প্লুরালিজম-এর বঙ্গানুবাদ। ইসলামী পরিভাষায় শির্ক-এর ইংরেজি অনুবাদ Idolatry বা Polytheism, মোটেও Pluralism নয়’-যোগ করেন মারুফ কামাল খান।
এদিকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বহুত্ববাদ কেন আনা হলো–এর ব্যাখ্যায় কমিশন প্রধান আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘বহুত্ববাদের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমের চেয়ে বৃহত্তর মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছি আমরা। যেখানে দলিতদের জায়গা হবে, থার্ড জেন্ডার, এথনিক মাইনরিটি (জাতিগত সংখ্যালঘু), রিলিজিয়াস মাইনরিটি (ধর্মীয় সংখ্যালঘু) সবার জায়গা হবে। দলিত, থার্ড জেন্ডার থেকে শুরু করে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। পরিসংখ্যান বলছে, ইতিহাস বলছে সেক্যুলারিজম সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে পারেনি। আমরা বরং, অপেক্ষাকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক করার চেষ্টা করছি।’