মনগড়া নয়, তালিকা তৈরিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অনুসরণের পরামর্শ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০১ পিএম

ফাইল ছবি
নতুন করে বহু পণ্যে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। এতে করে প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে ওষুধের দামেও। ফলে আবারও ওষুধের দাম বাড়বে কি না তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম যাতে না বাড়ে সেই পদক্ষেপের অংশ হিসাবে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সোমবার
সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাপক্ষে ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের
সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের
সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্ঠা নূরজাহান বেগম।
সভায়
ইনসেপ্টা ও ডল্টো ফার্মাসিউটিক্যাল, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, কনজুম্যার অ্যাসোসিয়েশন
অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ক্যানসার সোসাইটি, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
(ডবি্লউএইচও), ইউনিসেফসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায়
বক্তারা বলেন, কারও মনগড়া নয় ডবি্লউএইচও'র তালিকা ধরে এমন একটি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের
তালিকা করতে হবে। এটি করা গেলে দাম কমে যেতে বাধ্য। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে
পারে সরকারের এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। এটাকে শক্তিশালী করা গেলে
পুরো বাজারেই এর প্রভাব পড়বে।
সভায়
সভাপতিত্বে বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, Èভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এবং ওষুধ রোগ নিরাময়ে
ভূমিকা রাখে। এক সময় আমরা ৮০ ভাগ ওষুধ আমদানি করতাম, এখন দেড়শ'র বেশি দেশে রপ্তানি
করি। কিন্তু আমাদের দেশে রোগীদের চিকিত্সা পেতে গিয়ে যত খরচ করে তার বেশিরভাগই যায়
ওষুধ খাতে। এজন্য আমরা একটি অন্তর্ভুক্তি কাঠামো তৈরি করতে চাই। সব
মানুষ যাতে সাশ্রয়ী মূলে মানসম্মত ওষুধ পায়, সেজন্যই আমাদের এই প্রয়াস।'
তিনি
বলেন, ‘দীর্ঘদিন আগে অত্যাবশকীয় একটি
ওষুধের তালিকা করা হয়েছিল, যাতে ৯০ ভাগ মানুষের অসুখ হলে এগুলো ভূমিকা রাখতে পারে।
পরবর্তীতে সেটি নানাভাবে সংযোজন হয়েছে। এটাকে হালনাগাদ ও ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত
করা আমাদের মূল লক্ষ্য। কোন ওষুধগুলোর ক্ষেত্রে কোন মডেল আমরা বেছে নিতে পারি সেটি
দেখতে হবে।'
কনজুমার
অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা নিয়ম তৈরি করি কিন্তু মানি না। ১৯৯৮ সালে আইন
করা হলেও ২০২৩ সালে ওষুধের সঙ্গে কসমেটিক রাখার আইনটি পাশ হয়েছে। ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার
প্রবণতা সীমাহীন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
এ
সময় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ওষুধের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে
যত কম টাকায় ওষুধ পাই, পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বিদু্যত্, কর্মীদের বেতনসহ প্রতিটিতে
খরচ বেড়েছে। তবে আমরাও চাই মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ পাক। তবে এজন্য নীতিনির্ধারকদের
মূল নির্ধারণে পূর্ণাঙ্গ জানা থাকতে হবে। আমরা কোনো ওষুধের দাম বাড়াতে চাই না। সমাধান
করতে চাইলে কারো কথায় নয়, ভেবেচিনে্ত ডবি্লউএইচও'র অত্যাবশ্যকীয় তালিকা অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের
তালিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে।
ক্যানসার
সোসাইটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘প্রটোকল অনুযায়ী কোন ওষুধ রোগীর জন্য উপযোগী সেটি
লিখতে গিয়ে আমাদের জটিলতার মুখে পড়তে হয়। সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ রোগীর হাতে তুলে দিতে
হলে ডবি্লউএইচওকে অনুসরণ করতে হবে। সাধারণ ওষুধ থেকে শুরু করে ক্যানসারের ওষুধেরও তালিকা
আছে। সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিত্সা আছে, সেখানে অত্যাবশ্যকীয় ২৪টি ওষুধের সরবরাহ
নিশ্চিত করা গেলে রোগীদের জন্য অনেক বড় উপকার হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রচার-প্রচারণায়
যত খরচ করে এটিকে যদি কমিয়ে আনা যায়, কিংবা বিকল্প উপায় বের করা যায় তাহলে দাম কমবে।
এ ছাড়া কোনো একটি কোম্পানির সঙ্গে যদি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের হয় তাহলেও সংকট
কমে আসবে।
এ
সময় স্বাস্থ্য উপদষ্টো নূরজাহান বলেন, Èআমাদের
প্রত্যেককেই কম বেশি ওষুধ খেতে হয়। আমরা ব্যবসা করব, লাভও করব। কিন্তু মানুষের কথা
সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। ইডিসিএলকে কীভাবে শক্তিশালী করা ও পৃথিবীর অন্যতম সেরা সরকারি
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে সবার পরামর্শ চান উপদষ্টো।'