মা ও স্ত্রীকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট আমান আযমীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। ফাইল ছবি
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ‘আয়নাঘর’ নামক বন্দিশালায় দীর্ঘ আট বছর বন্দি থাকার পর চলতি বছরের ৭ আগস্ট মুক্তি পান সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী। এরপর থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন এ সেনা কর্মকর্তা।
পরে ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে গুম থাকার
লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছিলেন আমান আযমী।
দীর্ঘ ৮ বছর আযমীর জীবন থেকে কেড়ে নেওয়ায় তিনি মা-স্ত্রীসহ পরিবার পরিজন
কাউকে দেখার সুযোগ পাননি। এমনকি তারা বেঁচে আছেন, না মরে গেছে সেটিও তিনি জানতেন না। মুক্ত হয়ে জানতে পারেন মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
বুধবার সকালে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন
এক লম্বা স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল
আমান আযমী।
ফেসবুকে দেওয়া সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর স্ট্যাটাসটি হুবহু
তুলে ধরা হলো—
‘আসসালামু আলাইকুম। অনেক স্বপ্ন ছিল, আশা ছিল, দোয়া করেছিলাম, ইনশাআল্লাহ
জীবিত মুক্তি পেলে, আমি আর আম্মা দুজনেই সুস্থ থাকলে— আম্মা, বউ, বাচ্চারাসহ ওমরাহ
করব। আল্লাহ আমার জীবনের সেরা বন্ধু আম্মাকে নিয়ে গেছেন! অভাগা আমি আমারই ৩০ বছরের
ঘরবাড়ির (ক্যান্টনমেন্ট) ভেতরে গুমরে গুমরে কেঁদেছি, জানতেও পারিনি যে, আমার জীবনের
সবচেয়ে মূল্যবান প্রিয় মানুষটি আর নেই! আমি জালিমদের লিখিত আবেদন করেছিলাম— আমি জীবিত
আছি এবং ভালো আছি তা মা-স্ত্রী-সন্তানদের জানানোর জন্য; আর মা-স্ত্রী-সন্তানরা কেমন
আছেন সেই খবর আমাকে জানানোর জন্য। জানোয়াররা কোনো টু শব্দ করেনি। কাবা তাওয়াফ করার
সময় সেই কথা মনে করে চোখে পানি আসছিল। অনেক কষ্টে সামলিয়েছি। ’
সাবেক জামায়াত আমির গোলাম আজমের ছেলে লিখেন, ৭ আগস্ট রাতে মুক্তির পর
হাসপাতালের চেকআপ শেষে ফজরের পর বাসায় ফিরে প্রথমেই মায়ের (সেই সঙ্গে বাবারও) কবর জিয়ারত
করি। বুক ফেটে কান্না আসছিল। ৬টা মা-পাগল ছেলে আমার মায়ের লাশ কবরে নামানোর জন্য একজনও
নেই! জালিমরা, নব্য ফেরাউন গংরা বাকি ৫ ভাইকে যুক্তরাজ্য থেকে আসতে দেয়নি। এই জালেমরা
আব্বার জানাজার জন্যও বাকি ৫ ভাইকে আসতে দেয়নি। শয়তানও মনে হয় ওদের কাছে হার মানবে।
আযমী আরও লেখেন, প্রথমবার মায়ের কবর জিয়ারতের সময়কার মনের কষ্টের কথা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। মনে হচ্ছিল কবরটা খুঁড়ে ছোটবেলার মতো মায়ের বুকে শুয়ে থাকি, কপালে-গালে চুমু দিই। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, ‘মা ও মা, আমার প্রাণপ্রিয় আম্মা, তুমি কি শুনতে পাও আমাকে? তোমার নাড়িছেঁড়া বুকের ধন, তোমার কলিজার টুকরাটা জীবিত আছে, ফিরে এসেছে। তুমিও ফিরে আসো না মা। তোমাকে দেখে চোখ জুড়াই, তোমার গলার আওয়াজ শুনে কান জুড়াই, তোমার হাতের স্পর্শ পেয়ে অন্তরে শান্তি পাই। তোমাকে পেলে মুহূর্তেই আমার সব কষ্ট চলে যাবে আম্মা।
তোমার যেই চাঁদমুখখানা আমার সারাজীবনের সব কাজের, সব প্রাপ্তির শক্তি, সাহস ও প্রেরণার উৎস ছিল, সেই মুখখানা না দেখে আমি থাকব কি করে? বাঁচব কীভাবে? আমি শুনেছি, আমাকে জালেমরা অপহরণের পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তুমি আমার শোকে কাঁদতে কাঁদতে প্রায় অন্ধই হয়ে গিয়েছিলে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষীণ আশা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করেছ! ও মা, আমার নিজের কষ্টের চেয়ে আমার জন্য তোমার কষ্টের কথা ভেবে, তোমার চাদের মতন মুখের মলিন দশা চিন্তা করে বুক ফেটে কান্না আসছে মা।
তোমার আর আব্বার কাছ থেকে
শেখা কুরআনের শিক্ষা, ‘ইন্নাল্লাহামায়াস সবিরিন’, ‘ওয়াবাশশিরিস সোয়াবিরিন’ ই একমাত্র
শক্তি এখন। ছোট দুটাকে দেখে তোমাদের শোক ভুলে থাকার চেষ্টা করছি। আশা করি ইনশাআল্লাহ
জান্নাতুল ফেরদৌসে দেখা হবে’। হে আল্লাহ, তুমি আব্বা-আম্মাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে মিলিত
কর। আমাদের এমনভাবে পরিচালিত কর যেন আমরা সবাই আব্বা-আম্মার সঙ্গে জান্নাতুল ফেরদৌসে
মিলিত হতে পারি, আমীন!’