ব্ল্যাকমেইল হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা, ধরাছোঁয়ার বাইরে চক্র

আসাদুল্লা লায়ন
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২১ এএম

বিসিএস-২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদা রহমান (ছদ্মনাম)। তিনি একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। সম্প্রতি তার মোবাইল ফোনে একটি নম্বর থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয়, করোনার ৪র্থ ডোজ নিয়েছেন কিনা? জবাবে তিনি না নেওয়ার কথা জানালে তাকে সুবিধাজনক সময়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর মাহমুদা রাজি হলে তাকে রেজিস্ট্রেশনের কথা বলে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠানো হয়। ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তিকে ওটিপি জানিয়ে দেওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন তার মেসেজিং অ্যাপ ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটস্অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। একই ব্যাচের আরও একজন কর্মকর্তা সাইবার অপরাধীর ফাঁদে পড়েছেন।
এভাবে সাইবার অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। এমনকি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষভাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তিও পড়েছেন এই চক্রের কবলে। এক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অন্তত ৬ কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তারা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) দ্বারস্থ হয়েছেন। অপরাধীরা কৌশলে ওটিপির মাধ্যমে মেসেজিং অ্যাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। ওইসব অ্যাপে থাকা ব্যক্তিগত একান্ত ছবি অথবা আলাপচারিতা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ক্রমাগত ব্ল্যাকমেইল করছে। ভুক্তভোগীরা সাইবার পুলিশের দ্বারস্থ হলেও আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না চক্রের সদস্যদের। এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প দেখছে না পুলিশ।
জানা গেছে, ক্রেডিট কার্ড আপগ্রেডেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপগ্রেডেশন, হজের নিবন্ধন বা অন্য কোনো সমসাময়িক ইস্যুতে কথা বলে অপরাধীরা ওটিপি চায়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও মেসেঞ্জার হ্যাক করে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। প্রথমেই তারা ভুক্তভোগীর একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও বা কথোপকথনের খোঁজ করে, পেলে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী ছয় কর্মকর্তার মধ্যে দুজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এসব ঘটনায় তাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক আইডি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জড়িত সাইবার অপরাধীদের এখনো শনাক্ত বা গ্রেফতার করা যায়নি। সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রের সদস্যরা প্রতিটি ধাপে অত্যন্ত কৌশল অবলম্বন করছে। অন্যের পরিচয়ে বা ফেইক রেজিস্ট্রেশনে নেওয়া সিমকার্ড ব্যবহার এবং অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা নিয়েছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, সাইবার অপরাধীদের আখড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গার মতো এলাকার অপরাধীরা সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের টার্গেট করেছে। তারা আরও জানান, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সুন্দরী মেয়েরা টার্গেটেড লোকদের ভিডিও কল দিয়ে স্ক্রিন রেকর্ড করে। পরে তা দিয়েও ব্ল্যাকমেইল করে।
এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাছে এমন অভিযোগ করা হলে আমরা অপরাধীকে শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। এজন্য আমাদের পরামর্শ হলো, কারও সঙ্গে হুট করে ওটিপি শেয়ার করা যাবে না। ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় রাখা যাবে না। অপরিচিত ব্যক্তির ভিডিও কল রিসিভ করা যাবে না। অপরিচিত ব্যক্তি বা সোর্স থেকে পাঠানো কোনো লিংকেও প্রবেশ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, এছাড়া অপরিচিত কাউকে যাচাই না করে ফেসবুক ফ্রেন্ড না করাই ভালো। কেউ যদি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন তবে মনে রাখতে হবে টাকা দিয়ে কখনো তাদের হাত থেকে নিস্তার পাবেন না। মানসিকভাবে শক্ত হোন। প্রয়োজনে পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করুন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করুন। হ্যাক হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ ফিরে পেতে ওই অ্যাপে নতুন করে কোনো অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে বিরত থাকুন।