
প্রিন্ট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৩ এএম
চাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রশাসন ক্যাডার হন কামাল

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ এএম

৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান মো. কামাল হোসেন। মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা পরিচয়ে প্রতারণা-জালিয়াতি করে কোটা সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরি নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১–এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এই তথ্য জানিয়েছেন।
দুদক জানায়, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৩৫ ব্যাচের কর্মকর্তা কামাল হোসেন বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তিনি নওগাঁর আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
এজাহারে বলা হয়, আসামি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে জন্মদাতা পিতা মো. আবুল কাশেম ও মা মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে আপন চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নেন।
প্রতারণা ও জাল–জালিয়াতির অভিযোগে আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, মো. কামাল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি এবং ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নকালীন পিতার নাম হিসেবে তার প্রকৃত জন্মদাতা পিতা মো. আবুল কাশেমের নাম ব্যবহার করেন। পরবর্তী সময় একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে তিনি তার আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন।
দুদক জানায়, এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি পরীক্ষায় চাচা-চাচির নামই পিতা-মাতার নাম হিসেবে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে মো. কামাল হোসেন তার জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রকৃত পিতা-মাতার পরিবর্তে চাচা-চাচির নামই ব্যবহার করেন।
মামলা তদন্তের প্রয়োজনে মো. কামাল হোসেনের ডিএনএ টেস্টেরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এজাহারে বলা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, মো. কামাল হোসেনের জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে পিতা-মাতার নামের স্থলে চাচা-চাচির নামই উল্লেখ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে তিনি আপন চাচা-চাচিকে পিতা-মাতা সাজিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি গ্রহণ করেছেন।
মামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাইয়ের ইউএনও মো. কামাল হোসেন বলেন, আমার প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ মিথ্যা অভিযোগ দুদকে জমা দিয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিয়েছি। আমার কোনো কিছু জাল নথিপত্র নেই। তারপরও কেন মামলা হলো এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।