৬০ বছরে পদার্পণ
বিটিভি রক্ষায় সংস্কার কমিটি গঠনসহ ১২ দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কমিটি গঠনসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও শিল্পী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা।
তারা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি চরম আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতির ভারে ডুবতে বসেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। যেকোনো মূল্যে তারা প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত করার দাবি জানান।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব কথা বলেন।
‘৬০ বছরের বিটিভি, ডুবছে বিটিভি, বাচাঁও বিটিভি’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও শিল্পী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে বক্তব্য দেন- একুশে পদকপ্রাপ্ত সুরকার ও সংগীত পরিচালক এবং সংগঠনটির আহ্বায়ক শেখ সাদী খান, সংগঠনটির সদস্য সচিব ও বিটিভির বাদ্যযন্ত্র শিল্পী (ড্রামার) পলাশ কুমার সাউ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ৬০ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে। বাংলাদেশে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ বিনোদনের জন্য বিটিভির ছিল ব্যাপক ভূমিকা। বিশেষ করে ৭০ ও ৮০-এর দশকে নাটক, গান ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অনেক কালজয়ী গান, নাটক, শিল্পী ও কলাকুশলীর জন্ম দিয়েছে। আজকে যারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত, একসময় তাদের প্রাণের জায়গা ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই বিটিভিতে চরম অব্যবস্থাপনা, কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি জেঁকে বসেছে। অদক্ষতা ও জবাবদিহিতার অভাবে, বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্যে ডুবছে। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি মৃত্যুর শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। শিল্পীদের সম্মানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম চলছে এবং অনেক শিল্পীই সময়মতো তাদের পাওনা পাচ্ছেন না।
এ সময় তারা বিটিভি রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কমিটি গঠনসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- তালিকাভুক্ত শিল্পী, কলাকুশলীসহ সব শিল্পী সম্মানি শতভাগ বাড়াতে হবে। শিল্পীদের সম্মানি থেকে ১০% ভ্যাট কর্তন বন্ধ এবং সব অনুষ্ঠানের বাজেট শিট উন্মুক্ত করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তালিকাভুক্ত সব শিল্পী, কলাকুশলী, সুরকার, গীতিকার, বাদ্যযন্ত্রী ও অভিনেতাসহ সবপর্যায়ের শিল্পীদের গ্রেড এবং নীতিমালা অনুযায়ী বিটিভির সব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পীদের পেমেন্ট বা-শিল্পী সম্মানি অনুষ্ঠানের দিন রেকর্ডিং শেষেই প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক বিষয়ে দ্রুত গ্রেডেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে; টাকার বিনিময়ে এবং তদবিরে নিম্নমানের শিল্পী ও তালিকাভুক্ত নয়- এমন শিল্পীদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এছাড়া বিটিভির নীতিমালা ভঙ্গ করে সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম সংগীত শিল্পীদের অডিশন সম্পন্ন করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা কেন্দ্রে অনুমোদন ছাড়াই ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা যে লুটপাট করেছে তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এতদিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- তাও জানাতে হবে।