মুরগির দাম বেড়েছে, সয়াবিনের অস্থিরতা কাটেনি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম
মুরগির দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা। তবে ডজন প্রতি মুরগির ডিমের দাম কমেছে ৫ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে দুই সপ্তাহ ধরে চলা বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। যদিও গত সোমবার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও গত চারদিনে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। এখনো পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল।
তবে বাজারে সুখবর আছে অন্য প্রায় অনেক পণ্যেই। আলু, পেঁয়াজ ও সবজিসহ কিছু মুদি পণ্যেরও দাম কমেছে। শুক্রবার মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, রামপুরা, মালিবাগ, নিউমার্কেট, কারওয়ানবাজার ও কেরানীগঞ্জের আগানগরসহ বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানান, কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন, কোনো অনুষ্ঠান বা অজুহাত পেলেই দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। ১৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা না করায় দাম বাড়ানোর সাহস পায় তারা।
এদিকে দাম কমেছে ডিমের। ডজন প্রতি ৫ টাকা কমে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ১৬ ডিসেম্বর ও বিয়ে উপলক্ষে চাহিদা কিছুটা অবশ্যই বেড়েছে। কারণ এ সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। এছাড়া উৎসব উপলক্ষে অনেক খামারিই দুই-একদিন আগে মুরগি ছাড়বে। যার প্রভাবে ৫-১০ টাকা দাম বাড়াটা স্বাভাবিক।
সকালে রামপুরা বাজারে গিয়ে বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে হাতেগোনা দুটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেখানে আলম স্টোরের রেজাউল আলম বলেন, কোম্পানি গতকাল (বৃহস্পতিবার) তেল দেওয়ার কথা ছিল। শেষবেলায় জানিয়েছে দিতে পারবে না। শনিবার দেবে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একই অবস্থা। এরমধ্যে তেলের দাম বেড়েছে। আগামীকাল তেল পাবো বলে আশা করছি।
বাড়তি দাম যোগ করে বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা। তবে নতুন এ দামের তেল এখনো আসেনি। সরবরাহ সংকটের কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। নতুন করে দাম বাড়ার আগে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিনের লিটার ছিল ১৪৯ টাকা।
খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট থাকলেও গত সপ্তাহের চেয়ে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকায়। এছাড়া চিনি, আটা ও ময়দাসহ অন্য পণ্যগুলোর দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কমেছে দামও। এক-দেড় মাস আগে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। কেজিতে ৪০ টাকার মতো কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বাজারে এখন দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। এ ধরনের পেঁয়াজের কেজি মাস দেড়েক আগেও ছিল ১০০ টাকার মতো।
মালিবাগ বাজারের দোকানি আবু খালেক বলেন, নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু করেছে। পাতা পেঁয়াজও এসেছে। ফলে আগের মজুত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি চলে এলে দাম আরও কমবে।
নিম্নমুখী ধারা দেখা গেছে আলুর বাজারেও। ভারত থেকে আমদানি করা নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৭০ টাকায় নেমেছে। এ ধরনের আলুর আধিক্যের কারণে পুরোনো আলুর দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।
বাজারে শীতের সবজির সরবরাহও বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির দাম। সবজির কেজি এখন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সপ্তাহ দুয়েক আগেও যা ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। মুলার কেজি ৪০ থেকে নেমেছে ২০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি শালগম ৪০ থেকে ৫০ ও বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে প্রতিটি ফুল ও বাঁধাকপির কিনতে ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
কিছুদিন আগেও আকাশছোঁয়া কাঁচামরিচের দাম কমে তলানিতে নেমেছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ দামেই বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।