ট্রান্সকমের শেয়ার হস্তান্তর দলিল নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ পিএম

দুটি ভুয়া নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী গ্রুপ ট্রান্সকম লিমিটেডের শেয়ার ট্রান্সফারের দলিল তৈরি করে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) দাখিল করা হয়েছিল বলে আদালতে দেওয়া ডাক বিভাগ ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ওই দুটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ট্রান্সকম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ্ হকের ভুয়া স্বাক্ষর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক সাজেদুর রহমানের আবেদনের ওপর শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। তবে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক শরীফুর রহমান ফরেনসিক পরীক্ষার আবেদন মঞ্জুর করেননি।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্রুপটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান ও ট্রান্সকমের ৫ কর্মকর্তা এমনটি করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে শাযরেহ্ হক গুলশান থানায় বড় বোন সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। যেখানে শাযরেহ্ হকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রতারণার মাধ্যমে ট্রান্সকমের অধিকাংশ শেয়ার দখলে নেওয়ার অভিযোগ ছিল।
শাযরেহ্ হকের আইনজীবী আমিনুল হক এ বিষয়ে বলেন, আরজেএসসি থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যে নথি জব্দ করেছেন তাতে দেখা যায়, লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবী নজরুল ইসলামের মাধ্যমে সিমিন রহমানের নামে অধিকাংশ শেয়ার ট্রান্সফার সংক্রান্ত নথি আরজেএসসিতে দাখিল করেন।
তিনি বলেন, স্ট্যাম্প দুটির সত্যতা নিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন চান আদালত। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, যে ভেন্ডর থেকে এই স্ট্যাম্প দুটি সরবরাহের তথ্য আছে, সেই ভেন্ডরের লাইসেন্স ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাতিল করা হয়। আর ২০২০ সালে কোভিড থাকায় ওই ভেন্ডর কোনো স্ট্যাম্প উত্তোলন বা রেজিস্ট্রার জমা করেন নি।
তবে স্ট্যাম্প দুটি কবে নাগাদ অবমুক্ত করা হয়েছিল সেটি জানার জন্য ডিসি অফিস বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সহকারী নিয়ন্ত্রকের (স্ট্যাম্প) কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন নিতে আদালতকে পরামর্শ দেয়।
তার ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২ ডিসেম্বর ডাক বিভাগের সহকারী নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) শুভ্র সুত্রধরের আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয় স্ট্যাম্প দুটি ২০২৩ সালের মে মাসে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের কাছ থেকে সহকারী নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) গ্রহণ করেছিল।
শাযরেহ্ হকের আইনজীবী আমিনুল হক বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান, ওই দুটি স্ট্যাম্পে শাযরেহ্ হকের যে স্ক্যান করা স্বাক্ষর ব্যবহার হয়েছে, সেটির ফরেনসিক পরীক্ষার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত বলেছেন, যেহেতু স্ট্যাম্প দুটো ভুয়া তাই আর ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।
এ বিষয়ে সিমিন রহমানের আইনজীবী সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে ২০২০ সালে স্ট্যাম্প ব্যবহার করে শেয়ার ট্রান্সফারের দলিল করা হয়েছে। কিন্তু জিপিওর প্রতিবেদন বলছে, এই দুটি স্ট্যাম্প ২০২৩ সালের। ফলে সিমিন রহমানের ওপর যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি ভিত্তিহীন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শাযরেহ হক গত ২১ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় তার বড় বোন ও মাসহ ট্রান্সকমের আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা মামলা করেছেন।
সিমিন রহমান বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি ও দলিল জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শাযরেহ ও তার প্রয়াত ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে পারিবারিক সম্পত্তির—যার মূল্য দাবি করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা—ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, এই অভিযোগে এ মামলা করেন শাযরেহ।
একটি মামলায় শাযরেহ দাবি করেছেন, তার বোন ট্রান্সকমের আরও চার কর্মকর্তার সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল) তৈরি করে রেজিস্ট্রার অভ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) জমা দিয়ে বেআইনিভাবে ট্রান্সকমের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিকানা নিয়ে নেন।
কিন্তু বাদী কখনোই হস্তান্তর দলিলে (ফর্ম ১১৭) স্বাক্ষর করেননি বলে দাবি করেছেন। তার বাবাও জীবিতাবস্থায় কখনও হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর করেননি বলে দাবি করেছেন বাদী শাযরেহ হক। আসামিরা এসব নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।