ডিবি হারুনের প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা মামলা করেন স্বামী: স্বর্ণা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে ২০২১ সালে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। স্বামী কামরুল হাসান জুয়েলের করা মামলায় গ্রেফতারের পর সে সময় গণমাধ্যমে যা এসেছিল, প্রকৃত ঘটনা তার পুরোপুরি উল্টো বলে দাবি করেছেন এ অভিনেত্রী।
স্বামী জুয়েলের
কথা না শোনায় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান
ও ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদদের প্রভাব খাটিয়ে তাকে গ্রেফতার বলে দাবি করেছেন অভিনেত্রী।
সোমবার দুপুরে
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে
এক সংবাদ সম্মেলনে স্বর্ণা এই অভিযোগ করেন।
ঢাকা মহানগর
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ ও সৌদিপ্রবাসী কামরুল হাসান
জুয়েলের করা মামলায় অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণার কারাভোগের প্রতিবাদে এই সাংবাদিক সম্মেলনের
আয়োজন করা হয়।
রোমানা স্বর্ণা
বলেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে জুয়েলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১৯ সালে তারা বিয়ে করেন।
তিনি বলেন,
আমার ক্যারিয়ারে যখন সুসময় তখন বিয়ে করি কামরুল হাসান জুয়েলকে। তবে বিয়ের পরই পারিবারিক
দ্বন্দ্ব একপর্যায়ে গড়ায় মামলা-মোকদ্দমায়। আমাকে মিথ্যা বলে জুয়েল বিয়ে করেছিল। সে
তার আগের বউয়ের কথা গোপন রেখে বিয়ে করে। এসব জানার পরই বৈবাহিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি
ও নির্যাতন। একটা পর্যায়ে তার সঙ্গে ঘর না করার সিদ্ধান্ত নিই। নির্যাতনের জন্য কয়েকবার
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেও লাভ হয়নি। বিয়ের আগে বলেছিল, অভিনয় করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু
বিয়ের পর দেখা যায় উল্টো চিত্র। আমাকে অভিনয় করতে দেয়নি।’
স্বর্ণা বলেন,
‘বিয়ের পর মায়ের বাসায় থাকতাম। একবার আমার প্রথম ঘরের সন্তানকে শুটিং থেকে অপহরণ করে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় হুমকি দিত। দুবার তাকে ডিভোর্স দিই। শেষ পর্যন্ত
আমাকে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ডিভোর্স তুলে নিলে মামলা তুলে নেবে—এমন শর্তও
দেওয়া হয়।’
স্বর্ণা অভিযোগ
করে বলেন, তৎকালীন ডিবির প্রধান হারুন জুয়েলের অপকর্মে সহযোগিতা করতেন। তাই উপায় না
থাকায় একপর্যায়ে তিনি সমঝোতা করেন। মামলা তুলে নেন।
স্বর্ণা বলেন,
‘প্রথম ডিভোর্সের পর কিছুদিন ভালো গেলেও দ্বিতীয়বার ডিভোর্স দিলে আমাকে আটকানোর জন্য
মিথ্যা মামলা দেয় জুয়েল। আমি যেন অভিনয় করতে না পারি, কাউকে মুখ দেখাতে না পারি। আমাকে
গ্রেফতার করানোর জন্য ডিবি হারুনকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছিল বলে জানতে পারি। দেড় মাস
জেলে থাকার পর ডিভোর্স দিতে পারব না—সেই শর্তে জামিন করায়। পরিবারের কথা চিন্তা করে
এই শর্তে রাজি হই। ডিভোর্স চলাকালীন ভয়ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায় এসে
থাকত জুয়েল। দেড় বছর গৃহবন্দী করে রাখে আর সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি
দিত। পরিবারের কথা ভেবে এত দিন সহ্য করেছি। জামিনে বেরিয়ে আসার পর জুয়েল সৌদি আরব যায়।
সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। এর আগে পড়াশোনার
জন্য ছেলেকে পাঠাই। যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছি জেনে জুয়েল নানাভাবে আমাকে হুমকি দেয়।
দেশে আমার পরিবার থাকায় তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও রেহাই পাইনি।’
স্বামীর ক্ষমতার
বিষয়ে অভিনেত্রী স্বর্ণা বলেন, ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রয়াত
ফজলে রাব্বী মিয়া, ডিবি হারুন জুয়েলকে সহযোগিতা করতেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন
কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি আরব পাচার করতেন। এসব
কথা আমাকে বলেছিল যখন সম্পর্ক ভালো ছিল। তার কাছে অনেক মেয়ে পাঠাত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
অবৈধ কাজে সহযোগিতা করত। বিনিময়ে পেত মোটা অঙ্কের টাকা। জুয়েল মূলত হুন্ডির ব্যবসার
সঙ্গে জড়িত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হারুনের টাকা বিদেশে পাচার হতো জুয়েলের মাধ্যমে।’
স্বর্ণা বলেন,
‘জুয়েল আমার দ্বিতীয় স্বামী। তবে আমার নামে মামলাসহ ২৮টি বিয়ে করার কথা রটানো হয়েছিল,
যেগুলো ভিত্তিহীন। এই বিয়েগুলোর প্রমাণ আজও দিতে পারেনি। আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে
উপস্থাপন করা হয়েছিল তারও প্রমাণ দিতে পারেনি।’
স্বর্ণা আরও
বলেন, ‘নানা হুমকি দিত তাই, এত দিন কিছু বলতে পারিনি। সরকার পতনের পর দেশে এসেও কিছুদিন
অসুস্থ থাকায় এই বিষয়ে কথা বলিনি।