ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থায় এলাকাভেদে বৈষম্যের অভিযোগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম
সারা দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বৈষম্যের অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অভিজাত এলাকাগুলোয় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে নিয়মিত স্প্রে করা হলেও অনুন্নত ও সাধারণ এলাকাগুলোয় তা করা হচ্ছে না।
বছরব্যাপী পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব এলাকাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত ডেঙ্গু টিকা সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত ‘ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে গণসচেতনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির তালুকদার ও বিপিএমসিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন। এতে বিপিএমসিএর সভাপতি এমএ মুবিন খান সভাপতিত্ব করেন।
অভিযোগ করা হয়-ডেঙ্গু মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজধানীসহ দেশের সব খানের সাধারণ জনগণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অভিজাত এলাকাগুলোয় নিয়মিত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনের স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু অনুন্নত এলাকা এবং নানান বস্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম তেমন হয় না। এ কাজে নিয়োজিতদের বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী জানান, ডেঙ্গুজ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাস সংক্রমণ। বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এটি একটি উলেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ। এ রোগ ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হয়, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। তিনি বলেন, হালকা ফ্লু থেকে গুরুতর এবং সম্ভাব্য মারাত্মক অবস্থা পর্যন্ত নানা রকম উপসর্গ ডেঙ্গুজ্বর সৃষ্টি করে।
সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-উচ্চজ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট এবং পেশিতে ব্যথা, ফুসকুড়ি এবং হালকা রক্তপাত। গুরুতর ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু থেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের হস্তক্ষেপ ছাড়া জীবন ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়তে পারে।
অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির জানান, ডেঙ্গুজ্বরের নির্ণয় সাধারণত রোগীর ক্লিনিক্যাল লক্ষণ এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা অঞ্চলে এক্সপোজারের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। পাশাপাশি রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণের মতো ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলোও রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য অনুসারে, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে ৪৬৫ জন মারা গেছে। বছরের শুরু থেকে ৯০ হাজার ৭৯৮ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর প্রতিকার হিসাবে তিনি মশার সংখ্যা কমানোসহ মশার সংস্পর্শ হ্রাসকরণে জোর দেন।
অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, নিয়মিতভাবে পানির পাত্রগুলো খালি করা এবং পরিষ্কার করে সঠিক বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি ব্যবহার করা এবং সঠিক নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। এর সঙ্গে পোকামাকড় নিরোধক মশারি ব্যবহার করা বিশেষ করে শিশুদের মশারির নিচে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতাই একমাত্র সমাধান বলে অধ্যাপক ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী অভিহিত করেন। এর জন্য ব্যাপক প্রচারণা ও বিভিন্ন স¤প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনি তাগিদ দেন।
বিপিএমসিএর সভাপতি এমএ মুবিন খান জানান, জনসচেতনতা নিশ্চিত করতে সংগঠনটি সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা সভা ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন বাজার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা। তিনি জানান, সরকারের পাশাপাশি কার্যক্রমটি বছরব্যাপী পালন করার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।