পলিটিক্যাল ভিশন না থাকলে সংস্কার কার্যকর হবে না: নুরুল হুদা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, পুলিশের সবকিছু ভেঙে পড়েছে। পুলিশে মিলিটারাইজেশনের ফলে কী ক্ষতি হয়েছে সেটা সবাই দেখছেন। এখন পুলিশে মিলিটারি ব্রেন ডুকে পড়েছে। এজন্য পুলিশে সংস্কার জরুরি। পলিটিক্যাল ভিশন না থাকলে কোনো সংস্কারই কার্যকর হবে না। তাছাড়া জনগণকে সম্পৃক্ত করে পুলিশিং করলে বড় সংখ্যক পুলিশের প্রয়োজন হবে না।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। ‘৫৩ বছর পরও পুলিশ বাহিনী কেন জনবান্ধব হয়ে উঠছে না? পুলিশ সংস্কার : কেন? কোন পথ?’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন।
নুরুল হুদা আরও বলেন, আমাদের মতো বিভাজিত সমাজে পুলিশিং কঠিন বিষয়। পুলিশ পাবলিক সার্ভেন্ট থেকে ডমিস্টিক সার্ভেন্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও অন্য বাহিনী থেকে পুলিশের কোনো ইউনিটে কাউকে আনলে তাকে অন্তত ছয় মাস পুলিশিংয়ের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
আলোচনা সভায় পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য গোলাম রসুল বলেন, আমরা দুই মাস ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছি। কেমন পুলিশ হবে-সে বিষয়ে জনগণের মতামতকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা মিডিয়া এবং বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ চালাচ্ছি। সেখানে জনসাধারণের মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা যে জিনিসটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, সেটা হচ্ছে জাতীয় জননিরাপত্তা কমিশন গঠন করা। এটি একটি স্থায়ী কমিশন হবে, এর একটি সচিবালয় থাকবে এবং এর একটি গবেষণাগার থাকবে। রাজনৈতিক ব্যক্তি, সিভিল সোসাইটি নিয়ে সম্মিলিতভাবে এটি গঠন করা হবে। এজন্য বিদ্যমান আইন এবং যেসব অসংগতি রয়েছে সেগুলো রিভিউ করে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
সুপ্রিমকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, শুধু পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করলে হবে না। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে পুলিশের ইনফোর্সমেন্ট বিভাগে, তদন্ত বিভাগে এবং বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা এলে জনমানুষের কাছে পুলিশ একটি আদর্শ বাহিনীতে রূপ নিতে পারে।
সাবেক ডিআইজি মেজবাউন্নবী বলেন, এই ছাত্র আন্দোলনের পর আমার মনে হয় ভালো পুলিশ পাওয়ার এটাই শেষ সুযোগ, বারবার এমন সুযোগ আসবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আইনের শিক্ষার্থী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, পুলিশে চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। একজন পুলিশ সদস্য যদি বাড়িঘর ও জায়গা-জমি বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়। তাহলে তিনি যেভাবেই হোক তার সেই টাকা তুলতে অন্যায় পথ বেঁছে নেবেন।
হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, বিশিষ্ট দার্শনিক ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আনিসুজ্জামান, আইসিটি ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির কো-অর্ডিনেটর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর, ফ্রন্ট পেইজ সম্পাদক সেলিম খান, সাংবাদিক আহমেদ সেলিম রেজা, আইনের শিক্ষক ড. আহমেদুজ্জামান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী জাকিয়া শিশির, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. পারভেজ এবং সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মান্নান প্রমুখ।