Logo
Logo
×

জাতীয়

৮২ শতাংশ প্রসাধনীতে ভেজাল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কসমেটিকস ব্যবহারকারী নারীরা

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ এএম

৮২ শতাংশ প্রসাধনীতে ভেজাল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কসমেটিকস ব্যবহারকারী নারীরা

বাজারের প্রায় ৮২ শতাংশ প্রসাধনী বর্তমানে ভেজাল।  বিদেশি প্রসাধনীগুলোর মোড়ক লেজার প্রিন্টের মাধ্যমে হুবহু নকল করেন অসাধুরা। যা ব্যবহারে ত্বক পুড়ে (বার্ন) যায়। চামড়া ড্যামেজ হতে থাকে।  এসব ব্যবহারে শুধু ক্যানসার হতে পারে তা নয়, এসব থেকে স্নায়বিক দুর্বলতাও দেখা দিয়ে থাকে।  এসব প্রসাধনী ব্যবহারে তরুণী ও নারীরা আছেন বিপদের মধ্যে। 

নকল প্রসাধনীতে সয়লাব রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের এলাকার কসমেটিকসের দোকানগুলো। বহুতল মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লোগো লাগানো এসব নকল সামগ্রী। শীত সামনে রেখে সম্প্রতি বেড়েছে বিক্রি। আর এসব নকল পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বিশেষ করে সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যসচেতন তরুণী, কর্মজীবী নারী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসমস্যায় ভুগছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ত্বক, অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন নানা অসুখে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন ও পুলিশের নজদারির ঘাটতি এবং জনসচেতনতার ঘাটতিতে এভাবে নকল পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে বিশ্বমানের ব্র্যান্ড গার্নিয়ার, লরেল, রেভলন, হেড অ্যান্ড শোল্ডার, লাক্স লোশন, মাস্ক লোশন, অ্যাকুয়া মেরিন লোশন, পেনটিন, নিভিয়া লোশন, ফেড আউট ক্রিম, ডাভ সাবান, ইমপেরিয়াল সাবান, সুগন্ধির মধ্যে হুগো, ফেরারি, পয়জন, রয়েল, হ্যাভক ও কোবরা, অলিভ অয়েল, কিওকারপিন, আমলা, আফটার সেভ লোশন, জনসন, ভ্যাসলিন হেয়ার টনিক, জিলেট ফোম, প্যানটিন প্রো-ভি ও হারবাল এসেনশিয়াল লোশনের নামে ভেজাল প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে বেশি।

আরও দেখা গেছে, বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে রং ফর্সাকারী পাকিস্তানি চাঁদনী, নূর, ডিউ, গৌরী, গোল্ডেন, বোটানি, লাকী, ওয়াইসি হোয়াটিনিং ক্রিম, গোল্ড ক্রিম, হেনোলাক্স, মার্কোলাক্স স্পট কিওর ক্রিম ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম-লোশনসহ নানারকম ভেজাল প্রসাধনী। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এসব পণ্যের অধিকাংশই ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় তৈরি।

স্টাফ কোয়ার্টার কসমেটিকের দোকানে আসা হুরায়রা মাহজাবিন নামে এক ক্রেতা বলেন, পাকিস্তানি নাইট ক্রিম ব্যবহার করার পর আমার অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে পরে মুখে মেছতা পড়ে আছে। এ মেছতা দূর করার জন্য আবার মেছতা গার্ড ক্রিম ব্যবহার করছি অনেক দিন ধরে। অথচ ক্ষতি ছাড়া লাভ পাইনি। সর্বশেষ ডাক্তার দেখিয়েছি। তিনি বলেছেন ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে। এখন ভালো প্রসাধনী কোথায় পাব?

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এম এন হুদা যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে বাজারে সয়লাব ভেজাল প্রসাধনীগুলো মারাত্মক ক্ষতিকারক উপাদানে তৈরি হয়, যা ব্যবহারে ত্বক পুড়ে (বার্ন) যায়। চামড়া ড্যামেজ হতে থাকে। বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি হয়। এমনকি চেহারা বিকৃত হয়ে যেতে পারে। এসব রাসায়নিক উপাদানগুলো অ্যালার্জি, মাইগ্রেইনস এবং হাঁপানি সৃষ্টি করতে পারে। এসব ব্যবহারে শুধু ক্যানসার হতে পারে তা নয়, এসব থেকে স্নায়বিক দুর্বলতাও দেখা দিয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি চলছে রং ফর্সাকারী ক্রিম। এর মাধ্যমে বেশি প্রতারিত হচ্ছে মানুষ। বিশ্বে এখনো কোনো রং ফর্সাকারী ক্রিম আবিষ্কার হয়নি। তবে মুখে যদি কারও দাগ পড়ে বা অ্যালার্জির সমস্যা হয় তখন সেসব রোগের কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডা. হুদা বলেন, বিদেশি প্রসাধনীগুলোর মোড়ক লেজার প্রিন্টের মাধ্যমে হুবহু নকল করেন অসাধুরা। তাই এসব বন্ধ করতে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি প্রয়োজন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বাজারের প্রায় ৮২ শতাংশ প্রসাধনী বর্তমানে ভেজাল। ভেজাল ও নকল প্রসাধনী নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে, যার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পরীক্ষা করে যেসবে ভেজাল পাওয়া যাবে সেগুলো বাজার থেকে অপসারণের ব্যবস্থা করলেই মানুষ ধোঁকার হাত থেকে বাঁচবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, বাজারে ভেজাল ভোগ্য পণ্য ও নকল প্রসাধনী বিক্রির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ও নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। রাজধানীতে ৭ থেকে ১০টি টিম অভিযান পরিচালনায় কাজ করছেন। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নৈতিকতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তাদের মধ্যেও জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া জরুরি। অনলাইনে ভেজাল পণ্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম