মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে আবার সিন্ডিকেটের আশঙ্কা: সি আর আবরার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার বলেছেন, কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে, নতুন রাজনৈতিক গোষ্ঠী আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করতে পারে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার আহবান থাকবে, আর যেন সিন্ডিকেট না হয়। বিদেশি শ্রমবাজার দেশের সবচেয়ে বড় সেক্টর; যা অতীতে ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দয়া করে এই পথে আপনারা আর আগাবেন না। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আহবান থাকবে, সিন্ডিকেট হবে না, এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট: ক্ষতি মূল্যায়ন জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভার আয়োজন করে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস ইউনিট (রামরু)।
অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, মালয়েশি ইস্যুতে আর্থিক ক্ষতিতে আমরা খুব বিচলিত নয়। কিন্ত সামাজিক যে ক্ষতি হয়েছে, এতে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। যারা মধ্যবিত্ত হিসেবে জীবনযাপন করত, সেই জীবন থেকে তারা একদম নিচে নেমে গেছে। এই দায় কে নেবে। প্রতিটা বঞ্চিত শ্রমিকের বুকে যে ব্যাথা। তা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না। যখন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলি, বুঝতে পারি তাদের শ্রমের টাকায় আমরা বড়লোক হচ্ছি।
বায়রার প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি লেবার মাইগ্রেশনে। এটাকে ঠিক করতে হলে, অতীতে হওয়া অন্যায় দূর করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে বায়রার সদস্যদের বড় রকমের ভূমিকা পালন করতে হবে।
সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমবাজারে বাংলাদেশ যেহেতু বেশি ভুক্তভোগী, তাই এর দাবি জোরে তুলতে হবে। আমরা ক্ষতির পরিমাণ জানতে পেরেছি। যেহেতু আমাদের ভুক্তোভুগীর সংখ্যা বেশি, তাই আমাদের সরকারের উচিত মূল দায়িত্ব পালন করা।
এ সময় জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে আগের করা সমঝোতা স্মারক বাতিল করতে হবে। নতুন করে সমঝোতা করতে হবে। আর এখানে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে সেটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয় কমানো দরকার। আমি মনে করি, দেড় লাখ টাকার মধ্যে অভিবাসন ব্যয় নিয়ে আসা সম্ভব। অথচ ৫-৭ লাখ টাকা কর্মীদের থেকে নেওয়া হয়েছে। দেড় লাখ টাকার মধ্যে শ্রমিক পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়েদ সাইফুল হক বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসন সেক্টরে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। অভিবাসন খাতকে কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। যারা এই সেক্টরে দুর্নীতি করেছে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হবে। অন্যথায় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে, যেটা আমরা কমাতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ পাশের দেশ নেপাল-ভারত আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ কমে কর্মী পাঠাচ্ছে, তাহলে আমরা কেন পারছি না?
বায়রার সাবেক সদস্য মোস্তফা মাহমুদ বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে যারা সিন্ডিকেটকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে এই সেক্টরকে ঠিক করা যাবে না। আজকে যে মালয়েশিয়ার ভিসার দাম ১০ হাজার রিঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছে, এটা আমরা তাদের শিখিয়েছি। আগে ভিসার দাম ছিল ৩ থেকে ৪ হাজার রিঙ্গিত। তাই ভিসার দাম কমাতে হবে।
তিনি বলেন, আগের মন্ত্রী খাইছে, সালেহীন (সাবেক প্রবাসী কল্যাণ সচিব) খাইছে। এখনো সিন্ডিকেট তৎপর, উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাদের দহরম-মহরম। এখনো তারা ক্ষমতাধরদের সঙ্গে উঠা-বসা করছে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।