২০১৭-১৮ সালে সরকারি উদ্যোগে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির শুরু হয়। মাত্র ৭৮ হাজার টাকায় সেখানে কর্মী পাঠানোর ঘোষণায় লাখো মানুষ রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের আশায় গুড়ে বালি। রাতারাতি তৎকালীন সরকারঘনিষ্ঠরা বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। নির্ধারিত খরচ পাশ কাটিয়ে ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করে তারা। একেকজনের কাছ থেকে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় মালয়েশিয়া। পরে সে দেশের দরজা বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচিত সেই মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের প্রথম ১০ জনের অন্যতম রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ বশির। এছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক আলোচিত ব্যবসায়ী নুরু আলী, মেসার্স ক্যাথেরেসিসি ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন, মেসার্স প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, আল ইসলাম ওভারসিজের মালিক জয়নাল আবেদিন ওরফে জাফর, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক রুহুল আমিন, কেরিয়ার ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী এএসএম খায়রুল আমিন, ইসমত হিউম্যান রিসোর্সের পরিচালক তুহিন সিদ্দিকী ওরফে ওমি, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটসের মালিক আরিফ আলম এবং সানজেরি ইন্টারন্যাশনালের শেখ আব্দুল্লাহ। সরকার পতনের পর এদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
মামলা
আলোচিত রাব্বি ইন্টারন্যাশনালসহ সিন্ডিকেটে জড়িত ১০৩টি রিক্রুটিং এজেন্টের বিরুদ্ধে ৩ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় মামলা করেন আফিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক আলতাব খান। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্র। তারা প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর নামে মাফিয়া সিন্ডিকেট তৈরি করে। বিদেশে গমনেচ্ছু শ্রমিকের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তারা অন্তত ২৪ হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়। এভাবে সিন্ডিকেট সদস্যরা দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে।
সূত্র জানায়, ঢাকায় অঢেল সম্পদ গড়লেও গ্রামের বাড়িতে তেমন কিছুই করেননি বশির। তার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গেলে স্থানীয়রা জানান, বশির এলাকায় কালু নামে পরিচিত। দক্ষিণ ইউনিয়নের উত্তর কড়ৈতলী গ্রামসংলগ্ন বাজারে এক সময় তিনি চায়ের দোকান চালাতেন। পরে শ্রমিক ভিসায় তিনি সৌদির আরব চলে যান। বশিরের পিতা আব্দুল মান্নান এলাকায় দর্জির কাজ করতেন। এ কারণে বশিরের গ্রামের বাড়িটি এখনো স্থানীয়দের কাছে দর্জি বাড়ি নামে পরিচিত।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে মোহাম্মদ বশির শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আপনারা চাইলে আমার ক্ষতি করতে পারেন। মানুষের উপকার করা কঠিন। কিন্তু ক্ষতি করা সহজ। নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে তিনি বলেন, আনিসুর রহমান বুলবুল নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা দীর্ঘদিন ধরে তার ভবন দখল করে ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তাকে উচ্ছেদ করা হয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি নানা জায়গায় মনগড়া অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বনানীর অবৈধ ভবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে টুকটাক অনিয়ম হয়েছে এটা অস্বীকার করব না। তবে বুঝেনই তো। সব সময় নিয়ম-কানুন মেনে সবকিছু করা যায় না। তারপরও এ বিষয়ে আদালত থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি খুবই সাধারণ জীবনযাপন করি। এতিমখানা-মাদ্রাসা এসব নিয়েই আমার জীবন। কোনো ধরনের বিলাসিতা পাবেন না। সবারই কমবেশি শত্রু থাকে। আমারও আছে।