পদত্যাগের দিনও প্রতিদিনের মতো দাপ্তরিক কাজ সারেন তারা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম
ফাইল ছবি
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন অবশেষে পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরের পর মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ নিজেই সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনে এখন সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, তিনি ও দুই কমিশনার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে কী কারণে পদত্যাগ করেছেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনজন একসঙ্গে পদত্যাগ করায় দুদকের শীর্ষ পর্যায়ে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এতে কাজের গতি কমবে। কমিশন নিয়োগের আগ পর্যন্ত নতুন করে কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা যাবে না। মামলাও হবে না। সবাই রুট কাজ করবেন। কাজেই দ্রুত নতুন কমিশন নিয়োগের মাধ্যমে এ শূন্যতা পূরন করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা ।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ ও দুই কমিশনার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করার আগে মঙ্গলবার সকালে প্রতিদিনের মতো অফিসে গিয়ে তারা দাপ্তরিক কাজ সারেন। বিকালে তাদের দুদক সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ১টার দিকে সংস্কার কমিশনের বৈঠক স্থগিতের খবর আসে কমিশনে। কার্যত এর পরই তারা পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। আলাপকালে দুদকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার তাদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়ে অনেকটা নীরবে দুদক কার্যালয় ত্যাগ করেন। এ সময় সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন তাদের এগিয়ে দেন। বিকাল সাড়ে তিনটায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে আসার কথা ছিল দুদক সংস্কার কমিশনের।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ মার্চ মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহকে দুদকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। তিনি ইকবাল মাহমুদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তার সঙ্গে জহুরুল হককে কমিশনার (তদন্ত) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর দেড় বছর পর কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান অবসরে গেলে নিয়োগ পেয়েছিলেন আছিয়া খাতুন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টার হিসাবে পরিচিত সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা স্বৈরশাসকের দোসরদের বিদায় ঘণ্টা বাজতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় পতিত সরকারের আজ্ঞাবহ হিসাবে পরিচিত দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়াসহ দুদক ঢেলে সাজানোর দাবি ওঠে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়করাও সম্প্রতি দুদকে গিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে সংস্থাটির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দুদক সংস্কারে সরকার গঠন করে কমিশন। তখন সরকারের আস্থা অর্জনে দুদক শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুদকের এসব কাজ লোক দেখানো বলে মন্তব্য করতে থাকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দুদকের কাজের সমালোচনা করে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ দেন। দুদকের বিতর্কিত কাজ ও দায়সারা ভূমিকা নিয়ে যুগান্তরে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নানা বিতর্কের মুখে অবশেষে মঙ্গলবার পদত্যাগ করলেন দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার।