লাশ পুড়িয়ে পুলিশ কর্মকর্তার নৃশংসতা
সেই কাফিকে পাসপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় কর্মকর্তা বরখাস্ত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯ এএম
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভার এলাকায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা (এএসপি) আব্দুল্লাহিল কাফিকে পাসপোর্ট পেতে সহায়তার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ তদন্তে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রোববার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় অধিদপ্তরের একজন পরিচালককে প্রধান তদন্ত কমিটি করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
এদিকে সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কাফির পাসপোর্ট পাওয়া ঘটনায় আগারগাঁও বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেনকে জড়িয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে সব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। বাস্তবে ঘটনার সঙ্গে ইসমাইল হোসেনের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সাংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, পাসপোর্ট পেতে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা কাফি জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তিনি নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে কাগজপত্র দাখিল করেন। কিন্তু যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই ডিএডি জাহাঙ্গীর আলম তার আবেদন গ্রহণ করেন। এছাড়া অতি জরুরি (সুপার এক্সপ্রেস) ফি দিয়ে আবেদন করায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার পাসপোর্ট বুকলেট প্রিন্ট হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আগারগাঁও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিয়ে যান কাফি।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবু আসাদ বলেন, ভুয়া তথ্য এবং জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট নেওয়ায় ইতোমধ্যে কাফির পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে পরিচালক মাজহারুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবু আসাদ বলেন, এ ঘটনায় বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেনের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। বরং তিনি ঘটনা সম্পর্কে জানার পর পরই ঊর্ধ্বতন পর্যায়কে অবহিত করেন। ফলে কাফির পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু এ ঘটনার সূত্র ধরে কিছু মিডিয়ায় ইসমাইলসহ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে, যা দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের কাছে কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আবু আসাদ ছাড়াও অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট) সেলিনা বানু, প্রধান সিস্টেম এনালিস্ট নজরুল ইসলাম ভুঁইয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা জেলার সাবেক এএসপি আব্দুল্লাহিল কাফি ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে চরম নৃশংসতার পথ বেছে নেন। মূলত তার নির্দেশে আন্দোলনের সময় হতাহতদের গাদাগাদি করে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে তোলা হয়। এক পর্যায়ে কাফি নিজেই ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে বেশ কয়েকটি লাশ বিকৃত হয়ে যায়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সূত্র ধরে কাফিকে শনাক্ত করা হয়। বিপদ আঁচ করে আÍগোপনে থাকা অবস্থায় কাফি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বিমানবন্দরে আটক হন কাফি। পরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন।