আগে মিডিয়াকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করুন: মাহমুদুর রহমান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
দীর্ঘ দিন স্বৈরাচারের নির্যাতনের শিকার আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে হয়েছিলেন কারাবন্দি। পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি।
আজ রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর এত দ্রুত দানব হাসিনার বিরুদ্ধে কথা কমে যাবে ভাবিনি। আমি দেশে ফিরেই দেখতে পাচ্ছি যে, ফ্যাসিস্ট ও দানব হাসিনার জুলুমের চাইতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভালো ও মন্দ নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে। এটাই বাঙালিদের স্মৃতিশক্তির কম হওয়ার প্রমাণ।
তিনি বলেন, আপনারা বলে থাকেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত সরকারকে দেখতে চান। যদি সাহস থাকে তো আগে মিডিয়াকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করুন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, তরুণ, ছাত্র-জনতা গণবিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু আমার দেশ যখন শেখ হাসিনা প্রথম ফ্যাসিস্ট বলেছে, তখন তারা নাবালক ছিল। আমার দেশ পত্রিকার স্লোগান ছিল- ‘স্বাধীনতার কথা বলে’। এটা একটা মেসেজ। এই মেসেজ ঠিকই শেখ হাসিনা ও ভারতীয় দোসররা বুঝতে পেরেছিল। গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশে ভারতীয় হেজেমনি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্পাদক আর গণমাধ্যম মালিক বলেন সবাই ভারতের এজেন্ট।
তিনি বলেন, আমিই প্রথম লিখেছিলাম, ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’। সারা দেশের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে সে দিন যা লিখেছিলাম, আজ তা প্রমাণিত। এরপর লিখেছিলাম, ‘ফ্যাসিবাদের দিকে সরকারের যাত্রা’। যখন স্বৈরাচার আর ফ্যাসিবাদের পার্থক্য জানতাম না, ‘নবরূপে বাকশাল’ লিখেছিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগেই। একমাত্র আমার দেশ পত্রিকাই ভারতীয় আধিপত্য ও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের চরিত্র বুঝতে পেরেছিল।
তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ যখন আওয়ামী লীগের নির্লজ্জ দালালে পরিণত হয়েছিল, আমরাই লিখেছিলাম, ‘স্বাধীন বিচার বিভাগের নামে তামাশা’। অলিউল্লাহ নোমান তখন রিপোর্ট করেছিল, ‘চেম্বারের নামে সরকার পক্ষের স্টেট’। এ জন্য দু’জনই জেলে গিয়েছি। কিন্তু আজকে প্রমাণিত হয়েছে, আসলেই কী পরিমাণে আওয়ামীকরণ হয়েছিল বিচার বিভাগ।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক বলেন, মিডিয়ার ইতিহাসে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইতিহাসে স্কাইপ ক্যালেঙ্কারি প্রকাশ করা হয়েছিল... দুঃখজনক হলেও সত্যে যে, আমরা সেটির স্বীকৃতি পাইনি। তার পরিবর্তে আমাকে সহকর্মীসহ জেলে যেতে হয়েছে। অলিউল্লাহ নোমানকে সপরিবারে দেশ ছাড়তে হয়েছে। পেয়েছি লাঞ্ছনা-বঞ্চনা। সাংবাদিকদের জন্য আরও দুঃখজনক যে, যে স্কাইপ কেলেঙ্কারির জন্য নিজামুল হক নাসিম পদোন্নতিতে আপিল বিভাগে গেছেন, পরবর্তী সময়ে তিনি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তার অপরাধ খুঁজে বের করে আমি জেলে গিয়েছি।
বাংলাদেশে এখনো ফ্যাসিবাদ রয়েছে দাবি করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এসবির রিপোর্টে আমি এখনও ক্রিমিনাল। আর বিচারপতি নিজামুল হক নাছিম বিশিষ্ট ব্যক্তি। যার কিনা জেলে থাকা উচিত, তিনিই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
পুলিশের সংস্কার দাবি করে তিনি বলেন, ২০২২ সালে পদোন্নতি পেতে পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি আমার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে চার্জশিট দিয়েছিলেন। সেই পুলিশ সদস্য মহিউদ্দিন এখন কোথায় আমি জানি না, কিন্তু এখনো তাদের নিয়েই তো আমাদের পুলিশ চলছে।