নিরাপদ কর্মপরিবেশ চান আশুলিয়ার গার্মেন্ট মালিকরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ পিএম
ফাইল ছবি
এয়ার জিন্স কারখানার শ্রমিকদের ছোড়া ঢিলে ডুকাটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আহত হয়েছেন। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে ডুকাটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সোমবার কাজে যোগ দেননি। শ্রমিকদের দাবি, এয়ার জিন্স কারখানার মালিকের বিচার করতে হবে। অথচ দুই কারখানার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটারÑএভাবেই প্রতিদিন আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিয়ে গুজব ছড়িয়ে, উদ্ভট দাবি জানিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কারখানার স্টাফদের পিটিয়ে আহত করছেন। এখন ভয়ে স্টাফরাও কাজে আসছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন গার্মেন্ট মালিকরা।
সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কয়েকজন গার্মেন্ট মালিক সাংবাদিকদের সঙ্গে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। সভায় গার্মেন্ট মালিকরা এভাবেই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার কথা বর্ণনা করেন।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে কারখানা মালিক খান মনিরুল আলম শুভ বলেন, এক নারী শ্রমিক উধাওয়ের গুজবে রোববার আশুলিয়ায় ৩০টির বেশি কারখানা নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ রাখা হয়। পরে জানা গেল ওই শ্রমিক কাউকে কিছু না জানিয়ে দাদির বাড়িতে গেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কারখানা চালু সম্ভব নয়। মালিকদের অবস্থা এতটাই বেগতিক যে হামলার নিন্দা জানানোর অবস্থাও নেই। মালিকরা নিরাপদ কর্মপরিবেশ চান। মালিক-স্টাফ, কারখানার নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা জোরালো নয়। ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, কারা করছে? শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা এখন কোথায়? তারা তো ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানায়নি। শ্রমিকদের শান্তও হতে বলছে না।
শুভ আরও বলেন, শিল্প ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের শিল্পের প্রতি দায়িত্ব আছে। ৭ অক্টোবরের মধ্যে সেপ্টেম্বরের বেতন দেওয়ার কথা রয়েছে। মালিকরা বেতন দেবেন কীভাবে। আশুলিয়া অঞ্চলে পোশাক কারখানাগুলো গড়ে ২০-২২ দিন বন্ধ ছিল।
লুসাকা গ্র“পের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সরকার বলেন, বিশৃঙ্খলা শুরু থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ধরনের সহযোগিতা আশা করেছিলাম, তা পাইনি। শ্রমিকরা স্টাফদের পিটিয়ে আহত করছেন। নিরাপত্তার অভাবে বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে ৫-৭ দিন কারখানা খোলা রাখতে পেরেছি। অনেক বায়ার অর্ডার বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
এয়ার জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল কবির বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কারখানার শ্রমিকদের দিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছিলাম। এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কিছু বহিরাগত শুধু এ কারণেই আমার কারখানায় অগ্নিসংযোগ করতে চেয়েছে। আমার স্টাফ, শ্রমিকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা প্রতিহত করেছে। না হলে ২০০ কোটি টাকার ফেব্রিক পুড়ে যেত। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, দেশকে কি আমরা কিছুই দিইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে না পারলে কারখানা চালাব না।
এমবিএম গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরান সাদিক বলেন, যারা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল, তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আর আমরা যারা গার্মেন্ট মালিক, তাদের প্রতিদিন হার্ট অ্যাটাক হয়, রাতে ঘুম হয় না। গার্মেন্ট মালিকরা রক্তচোষাÑএ ধরনের একটি মিথ গার্মেন্ট মালিকদের সম্পর্কে বানিয়ে রেখেছে। আদতে অনেক মালিকের কারখানা চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। তিনি আরও বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে ৫ বছরের মধ্যে গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে। যেমনটা হয়েছিল যুক্তরাজ্য, জাপান, শ্রীলংকার ক্ষেত্রে। পুরো আফ্রিকা গার্মেন্ট ব্যবসা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। ভারত ইতোমধ্যে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করেছে। তখন ৪০ লাখ শ্রমিকের কী হবে, সে কথা কেউ চিন্তা করছে না।
ডুকাটি গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়ের মিয়া বলেন, স্টাফদের মেরে শ্রমিকরা রক্তাক্ত করেছে। থানায় মামলা করেছি, পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। কোনো দাবি ছাড়াই শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখছে। আজ (সোমবার) আমার কারখানায় কাজ বন্ধ। কারণ, এয়ার জিন্স কারখানার শ্রমিকরা ছাদ থেকে ঢিল মারার কারণে আমার কারখানার শ্রমিক আহত হয়েছেন। অথচ তার কারখানা থেকে আমার কারখানার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এখন শ্রমিকদের দাবি, আমি যেন এয়ার জিন্সের নাজমুল ভাইয়ের বিচার করি। এটা কি কোনো যৌক্তিক দাবি হতে পারে।
এনভয় গার্মেন্টসের পরিচালক শেহরিন সালাম ঐশী বলেন, আমার কারখানায় শ্রমিকরা এক স্টাফকে মাথায় আঘাত করেছে, তার ২২টি সেলাই লেগেছে। আরেক স্টাফকে বেধড়ক পিটুনি দেওয়ায় কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। আমরা এমন অসহায় যে থানায় মামলা পর্যন্ত করতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা বন্ধ হবে না।