ডিসি নিয়োগে ৩ কোটি টাকা ঘুসের বিষয়ে যা জানাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেছেন, তিন কোটি টাকার চেক দিয়ে ডিসির পদায়নের খবরটি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সোমবার বিকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভুয়া চেক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
সিনিয়র সচিব বলেন, সম্প্রতি কালবেলা নামক পত্রিকা বড় ধরনের একটি গুজব ছড়িয়েছে। ভুয়া চেকের ছবি দিয়ে একেবারে ভাইরাল নিউজ করেছে। এটি একটি ভুয়া খবর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, গণমাধ্যমের প্রতি আমার অনুরোধ, যে কোনো সংবাদ করার আগে একটু যাছাই করে নেবেন।
এই ধরনের খবর ছাপালে গণমাধ্যম সম্পর্কে একটি প্রশ্নবোধক বার্তা চলে এসে যায়।
তিনি আরও বলেন, মির্জা সাবেদ আলী নামে এক ব্যক্তি একটা ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন পদ্মা ব্যাংকের মৌলবী বাজার উপশাখায়। ২০০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্টটি খুলেছিলেন ২০২৩ সালে। জনপ্রশাসনের উদ্যোগে যে দিন তদন্ত করা হয় সেই দিন মীর্জা সবেদ আলীর ওই অ্যাকাউন্টে ব্যালান্স ছিল জিরো টাকা। কোনো টাকাই ছিল না তার অ্যাকাউন্টে।
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, এই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে কী লাভ? এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
তদন্তকালে দেখা গেছে, ব্যাংকের ম্যানেজার ফর্ম পূরণ না করে তার অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল সে ঠিকানায় সে আদৌ থাকেন না। সেই লোকের ওইদিন থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। যে তিন কোটি টাকার চেক দিতে পারে সে কি এত হালকা হবে? সিনিয়র সচিব বলেন, এককথায় বলে দিতে পারি, ভুয়া একটি বিষয়কে জাতীয় পর্যায়ে এনে মানুষকে বিব্রত করা হয়েছে। এতে কেউ ছোট হয় না, দিন শেষে যারা নিউজটা করেছে তারাই ছোট হয়েছে।
মোখলেস উর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আমরা অনুরোধ করব সব ব্যাংকে যেন নির্দেশনা দেওয়া হয়, নিয়ম-কানুন মেনে যেন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়। এই ধরনের একটা ফেক লোক এত বড় একটি ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে, এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করছি।
সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব,এ ব্যাপারে তারা যেন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। নওগাঁর ডিসি হিসাবে পদায়ন হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মো. আব্দুল আউয়ালের পক্ষে ওই যুগ্মসচিবকে চেকটি দেন মো. মীর্জা সবেদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী। কাঙ্খিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় চেকের বিপরীতে টাকা জমা দেওয়া হয়নি। সংবাদ প্রকাশের পর অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২৪ সেপ্টেম্বরই অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে চেকের সত্যতা যাচাই করে তিনদিনের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল।