গোলটেবিলে বক্তারা
আমাদের সংবিধান জনগণকে ধারণ করতে পারেনি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ পিএম
বাংলাদেশের সংবিধানে নানা ভালো কথা লেখা থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিপালন হয়নি। দেশ গঠনের ৫৩ বছর পার হলেও সংবিধান দেশের জনগণকে ধারণ করতে পারেনি।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার’বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
এতে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ৫৩ বছরে সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারেনি। এই দেশে মানুষ ভোট দিয়েছে, কিন্তু যারা ক্ষমতায় গেছে তারা বিষয়টিকে এমনভাবে কুক্ষিগত করেছে, বাকি যারা সাধারণ মানুষ তারা নিজেদের রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে মনে করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আইনে কী আপনি লিখছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবে কী করছেন। আইন সবার জন্য সমান, এটা আমরা সবাই বলি, কিন্তু এটা কতটা মানা হয়? রুমিন বলেন, সংবিধান সংশোধন করেন আর নতুন করে লেখেন তাতে কিছুই হবে না যদি না রাজনীতিবিদরা আপ্তবাক্য হিসাবে মানেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, দেশে যখন কোনো বিপ্লব সংগঠিত হয় সেটা কি সংবিধান মেনে হয়? যদি না হয়, ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনে বড় একটা ঘটনা, তাহলে সংবিধান কি এটা ধারণ করে? কেন করে না? সংবিধান কি বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থানের কোনো অপশন রাখে না? যে ঘটনা আমাদের পুরো জাতিকে পরিবর্তন করে দেয়, পুরো জাতির আকাক্সক্ষাকে পূরণ করে দেয়, সেটা সংবিধান ধারণ করে না, তাহলে এটা কেমন সংবিধান!
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কি সংবিধানের আলোকে হয়েছিল, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট যে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেল এটা কি সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে? তাহলে আমরা যেটাকে সংবিধান বলছি, যা আমাদের পুরো জাতিকে দিকনির্দেশনা দিবে, যা যা করব এই সংবিধান অনুযায়ী আমরা করব, কিন্তু এটা তো আমরা করলাম না, তাহলে সংবিধান লঙ্ঘন করাই কি সংবিধানের সর্বোচ্চ প্রতিপালন?
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমরা যদি নতুন করে সংবিধান লিখতে চাই তাহলে আমাদের সামনে গণপরিষদের প্রশ্ন আসবে, সে গণপরিষদে সদস্য কারা হবেন সে প্রশ্ন আসবে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজি কিনা সে প্রশ্ন আসবে। এই মুহূর্তে আমরা ঐকমত্যে আসতে পারব কিনা সে প্রশ্নও আসবে। সেখানে আমরা ঐকমত্যে আসতে না পারলে সংকট প্রকট হবে এমন ভয় আমার মধ্যে আছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে কেউ যদি নতুন সংবিধান করতেও চায় সেটা নতুন করে শুরু করতে হবে তা নয়। তাই আমাদের সংবিধানে যে কনটেক্সট রয়েছে সেটা আমরা বাদ দিতে পারব না। এটা রেখেই আমাদের শুরু করতে হবে। সেই জায়গা থেকে সংবিধান যদি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় তাহলে সেটা কীভাবে ঠিক করব? আমার কাছে মনে হয়, এটা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে ঠিক করা দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার, নতুন রিপাবলিক দরকার। এই বিষয়ে সম্ভবত সবাই একমত হবেন। কিন্তু এর চরিত্র কি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সে ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই রাষ্ট্রের ভিত্তি কী হবে? নতুন সংবিধান নাকি এর সংস্কার। আমরা একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান চাইলে সে ব্যাপারে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আন্দোলন শেষ হওয়ার দুই মাস পূরণের আগেই বিভক্তি শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনে কার কতজন শহিদ হয়েছে, কে আন্দোলনের প্রবক্তা, কোন দলের কতটা অবদান সে নিয়ে কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আন্দোলনের স্পিরিটে তো তা ছিল না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।