গণঅভ্যুত্থানে কণ্ঠ বিকৃতি হয়েছে কয়েকশ মানুষের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম
ফাইল ছবি
কোটা সংস্কার ও পরবর্তী সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে অংশ নিয়ে উচ্চস্বরে আওয়াজ করতে গিয়ে শত শত মানুষের কণ্ঠ বিকৃতি হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেলের আঘাতে বহু মানুষের শ্রবণ শক্তিতে প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই ঠিকমতো শুনতে পারছেন না। এমন সমস্যা হলেও চিকিৎসা সেবার আওতায় আসছে একেবারে হাতেগোনা। সরকারি হাসপাতালে স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি সেবা যুক্ত না থাকায় বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই ভরসা।
সম্প্রতি ঢাকার অদূরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সমস্যার ভুক্তভোগীদের জন্য ক্যাম্প করেছে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট পেশাজীবীদের সংগঠন সোসাইটি অব স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট (এসএসএলটি)। যেখানে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৪২ জনকে কণ্ঠ থেরাপি দেওয়া হয়েছে। যাদের সবার কণ্ঠই বিকৃতি ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছয় বছর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন পাস করে সরকার। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও আইনটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় কোর্স সম্পন্ন করেও দিতে পারছেননা এ খাতের চিকিৎসকেরা। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থেরাপিস্টরা আইনটি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনেও আইনটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে এসএসএলটি। এ সময় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এসএসএলটি’র নির্বাহী সদস্য আহাম্মদ শরীফ সাকিব। মূল বক্তা ছিলেন এসএসএলটি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি ফিদা আল শামস।
এসএসএলটির নির্বাহী সদস্য আহাম্মদ শরীফ সাকিব বলেন, ‘একজন স্পিচ থেরাপি চিকিৎসক কথা, ভাষা, যোগাযোগ, বাক, শ্রবণ, কণ্ঠস্বর, খাবার চিবানো ও গলধঃকরণসংক্রান্ত প্রতিবন্ধিতা ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা রোগীর সমস্যা নির্ণয় করে এবং এ সংক্রান্ত পরীক্ষণ-নিরীক্ষণ, চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রয়োগসহ উপদেশ, চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের জন্য যে কোড রেখেছে সেখানে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টদের কোডভিত্তিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ও গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষের একটি বড় অংশের কণ্ঠস্বরের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। উচ্চস্বরে ও স্লোগানে নিজেদের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠের ওপর চাপ পড়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, কণ্ঠনালীর আশ পাশে ব্যাথাসহ বিভিন্ন উপসর্গের রোগীরা থেরাপি চিকিৎসা নিতে আসছেন। উচ্চমাত্রার সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ, টিয়ার শেল ও গুলিবর্ষণের বিকট আওয়াজে অনেকেই আগের মত ভালো শুনতে পাচ্ছেন না। অনেকে অল্প শব্দেই অনেক বেশি সংবেদনশীল হচ্ছেন। নিজে ভালো শুনতে পাচ্ছেন না দেখে জোরে জোরে কথা বলছেন। তাদের শ্রবণ সমস্যা নির্ণয় করে কথা বলা ও যোগাযোগের চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্থ ব্যক্তিদের পুনর্বাসনকেন্দ্র সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্যা প্যারালাইজডসহ (সিআরপি) স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টরা ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই সেবা প্রদান করে আসছেন। এ সব ব্যক্তিদের সরকারিভাবে মূলধারায় যে স্বাস্থসেবা প্রদান করা হচ্ছে সেই সেবায় স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিসহ অন্যান্য রিহ্যাবিলিটেশন স্বাস্থসেবাকেও অন্তর্ভুক্ত করা অতিই জরুরি। নতুবা এ সব ব্যক্তিদের স্বাস্থ এবং পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।’
মূল বক্তব্যে ফিদা আল শামস বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে এ খাতের চিকিৎসকেরা সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু কিভাবে তারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত হবেন সে ব্যাপারে কোনো প্রক্রিয়া ছিলনা। ২০১৮ সালে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন পাস করে। সেখানে ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি ও স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির কথা উল্লেখ করা হয়। আমাদের যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও আইনটি কার্যকরের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এটা নিয়ে কাউন্সিলকে বহুবার চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন স্টোক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু এখনও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় রিহ্যাবিলিটেশন স্বাস্থসেবাকে যুক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আইনে যোগ্যতা হিসেবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে পরিচালিত এক বছর ইন্টার্নশিপসহ পাঁচ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। বিএসসি সম্পন্নকৃত এবং যারা প্রাক্টিক্যালি শিক্ষার্থীদের সুপারভিশন করেন তারা সকলেই বিএসসি ইন স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি সম্পন্নকৃত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আইন হলেও এখনও নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ৩২ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে, কিন্তু ছয় বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই। এতে করে মানুষ সেবা নিতে পারছেনা। ফলে অযোগ্য ও অনভিজ্ঞরা নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে কোর্স করাছে। এতে করে ভুল থেরাপির শিকার হচ্ছেন। আমরা অনতিবিলম্বে আইনটির বাস্তবায়ন চাই।’