পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতা
দায়ীদের বিচার দাবি সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ এএম
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সম্প্রতি সহিংস ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, এই ঘটনার নেপথ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের ইন্ধন থাকতে পারে। এ এলাকার অখণ্ডতা রক্ষা ও শান্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে মাঠে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
পার্বত্য তিন জেলায় যাতে ফের সহিংস ঘটনা না ঘটে সেজন্য পাহাড়ি ও বাঙালিদের সঙ্গে সংলাপ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে সরাসরি নির্বাচন, চাঁদাবাজি বন্ধ, ভূমি সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেন। শনিবার রাজধানীর রাওয়া হলে ‘রাওয়া রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি ফোরাম (আরআরএসএফ)’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব সুপারিশ করেন।
অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের সংগঠন রাওয়ার চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনোয়ার হুসাইনের সভাপতিত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং উত্তরণে প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য পদক্ষেপসমূহ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. শওকত আরা ও ড. মাহফুজ পারভেজ ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েক কর্মকর্তা।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের যে পরিমাণ জমি আছে তা বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১০ ভাগের ১ ভাগ। সেখানে খনিজ সম্পদ রয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। অবস্থানগত ও কৌশলগতভাবে পার্বত্য জেলাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পার্বত্য অঞ্চলে যেসব সমস্যা রয়েছে তার বহুমাত্রিক সমাধান দরকার। সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানকার মানুষের সঙ্গে সরকারের সংলাপ হওয়া দরকার। অনতিবিলম্বে ওই সংলাপ হওয়া উচিত।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনোয়ার হুসাইন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্রান্তিকাল পার করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমরা চিন্তিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি ইঞ্চি জমি বাংলাদেশের। এই জমি রক্ষা করার জন্য যা যা করার তার সবই করব। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বা মিয়ানমার যদি পার্বত্য জেলায় হস্তক্ষেপ করে তা আমরা মেনে নেব না।
পার্বত্য এলাকার সহিংসতায় পার্শ্ববর্তী দেশের ইন্ধন থাকতে পারে জানিয়ে ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, একটি মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে একজনকে হত্যা এবং ওই ঘটনায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অন্য কী কী কারণ আছে তা দেখতে হবে। ভারতের সেভেন সিস্টার ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাব পার্বত্য জেলাগুলোতে পড়েছে। সেখানে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে সংঘাত বন্ধে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দেন ড. শওকত আরা। প্রথমে পাহাড়িদের সঙ্গে পরে বাঙালিদের সঙ্গে সরকারের সংলাপ করা উচিত। এরপর বাঙালি ও পাহাড়িদের সঙ্গে যৌথ সংলাপ করার মধ্য দিয়ে আস্থা তৈরি করতে হবে।
অর্ন্তবর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে পাহাড়ে সংঘাত ছড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবীর তালুকদার। তিনি বলেন, অবিশ্বাসের কারণে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে কিছুদিন পরপরই সংঘর্ষ হয়। তবে এবারের সংঘর্ষ ভিন্ন বার্তা দিয়েছে। সরকারকে বিপদে ফেলতে ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে বাইরের (অন্য দেশের) হাত রয়েছে।
সংঘাতের ঘটনায় তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস স্থাপনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তুষার কান্তি চাকমা বলেন, ৯০ শতাংশ পাহাড়ি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশ্বাস করে না। শান্তি চুক্তি কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা কী লোক দেখানো ছিল? সাম্প্রতিক সংঘাতের ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও সক্রিয় করতে হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবু তায়েব মো. জহিরুল আলম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে। সেজন্য স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এ নির্বাচন হতে হবে। ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে।
পার্বত্য জেলায় সহিংসতার জন্য চাঁদাবাজিকে অন্যতম কারণ উল্লেখ করে লে. কর্নেল আব্দুল আওয়াল বলেন, পাহাড়ের সব জায়গায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এই চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বাঙালি ও পাহাড়িদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। পাহাড়িদের সঙ্গে মিশতে হবে। তাদের সংস্কৃতি বুঝতে হবে।