একান্ত সাক্ষাৎকারে ধর্ম উপদেষ্টা
ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ঢেলে সাজাতে চাই
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম
শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তোপের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম আলেম উপদেষ্টা।
আ ফ ম খালিদ হোসেন ইসলামি অঙ্গনে তুমুল জনপ্রিয়। তার মূল নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। কওমি, আলিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় দেশে প্রচলিত শিক্ষার তিন ধারাতেই তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আ ফ ম খালিদ হোসেন শিক্ষা, গবেষণা ও ধর্মীয় বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দেশের ইসলামী ঘরানার প্রায় সবার সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
হজ-ওমরাহর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংস্কারসহ ধর্ম মন্ত্রণালয় সব কাজে আমূল পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন আ ফ ম খালিদ হোসেন। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন যুগান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের সহ সম্পাদক তানজিল আমির। সঙ্গে ছিলেন মুহসিন আল জাবির।
যুগান্তর: শুরুতেই আপনার জন্ম, বেড়ে উঠা ও শিক্ষাজীবন নিয়ে জানতে চাই
আ ফ ম খালিদ হোসেন: চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার বাবুনগর গ্রামে ১৯৫৯ সালে আমার জন্ম। আমার বাবার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ (রহ.)। মায়ের নাম নুরুন্নাহার বেগম। তাদের স্নেহ ছায়ায় আমি গ্রামেই বড় হয়েছি। আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত। এরপর মাদ্রাসায় চলে যাই। পরবর্তীতে ব্যক্তিগতভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। এরপর আমি আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষা দিয়েছি। ১৯৭৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে হাদিসের উপরে আমি কামিল পাস করেছি।
আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় আমি বোর্ডে প্রথম হয়েছিলাম। তখন আমার খুশি ও আনন্দ ছিল বাঁধভাঙা জোয়ারের মত, এখনো আমি সেটি অনুভব করি। তখন ফার্স্ট ক্লাস খুব কম মানুষ পেত। তো আলিম ও ফাজিল দুটাতেই আমি প্রথম বিভাগ পেয়েছি। এটা আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা।
আমার শিক্ষকদের মধ্যে আলিয়া লাইনের শিক্ষকরা যেমন ছিলেন তেমন দেওবন্দী ধারার উস্তাদরাও ছিলেন। আমি তিরমিজি পড়েছি যার কাছে তিনি ছিলেন ফাজেলে দেওবন্দ। তিনি সরাসরি শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানির কাছে হাদিস পড়েছেন।
আবু দাউদ শরীফ যার কাছে পড়েছি তিনিও ফাজেলে দেওবন্দ ছিলেন। বুখারি শরিফ যার কাছ থেকে পড়েছি তিনি কলিকাতা আলিয়ার গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত এবং হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানবীর মুরিদ ছিলেন। পটিয়া আল জামিয়াতুল ইসলামিয়ায়ও আমি দুই বছর পড়েছি।
এরপরে ফাজিল, কামিল শেষে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি। সেখানে আমি বিএ অনার্স এমএ ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে পাশ করেছি। ১৯৮২ সালে অনার্স ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেছি।
তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে আমি পিএইচডি সম্পন্ন করেছি নবী করিম (সা.) এর খুতুবাত এবং তার সামাজিক সাংস্কৃতিক সমীক্ষা- বিষয়ে। ইংরেজি ভাষায় এ নিয়ে একটি বড় ধরনের গবেষণা কর্ম করেছি।
চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ভারতের লখনৌ এই তিন ইউনিভার্সিটির স্কলাররা আমার গবেষণা কর্মটি পরীক্ষণ করে ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট আমাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে।
যুগান্তর: আপনার অধ্যাপনা ও কর্মজীবন নিয়ে কিছু বলুন
আ ফ ম খালিদ হোসেন: ১৯৮৩ সালে মাস্টার্স করার পরে আমি গবেষণায় এমফিল কোর্সে ভর্তি হই। সাতকানিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় ১৯৮৫ সালে ইসলামি ইতিহাস ও আরবি ভাষা প্রভাষক হিসাবে যোগদান করি। সেখান থেকে ১৯৯২ সালে আমি চট্টগ্রামের ওমরগণি এম.ই.এস. কলেজে চলে আসি ইসলামি ইতিহাসের লেকচারার হিসেবে। একটানা ২৬ বছর এই কলেজে আমি অধ্যাপনা করেছি। সেখানে বিভাগীয় প্রধান, কলেজ গভর্নিং বোর্ডের মেম্বারও ছিলাম। ২০১৯ সালে আমি কলেজ থেকে অবসর নিয়েছি।
এরপর দুই বছর আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেছি। মাঝে কলেজের অধ্যাপক থাকাকালীন পটিয়া মাদ্রাসায় সপ্তাহে দুইদিন করে অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে পাঁচ বছর ছিলাম। এক বছর জামিয়া দারুল মাআরিফে ওয়াসিউলুল আলাম নামে একটি বিষয়ে পাঠদান করেছি। সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে যোগদান করার আগেও আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক ছিলাম। এটাই আমার অধ্যাপনা জীবন।
যুগান্তর: লেখক হিসেবে আপনার যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা রয়েছে, আপনার লেখক হয়ে ওঠার গল্প জানতে চাই
আ ফ ম খালিদ হোসেন: পটিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক আত তাওহিদে আমার প্রথম লেখা ছাপা হয়। হজরত ওমরকে (রা.) নিয়ে একটি অনুদিত লেখা ছিল সেটি। প্রথম যখন ছাপা কাগজে আমার লেখা প্রকাশিত হয় খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
সেখান থেকেই আমি লেখার প্রতি উৎসাহ বোধ করি। আমার মায়ের বংশের অনেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তারা গল্প লিখতেন, তাদের হাতের লেখাও অনেক ভালো ছিল। আমার মনে হত আমি পারিবারিকভাবে লেখালেখির যোগ্যতা পেয়েছি। আমার মায়ের বংশের ঐতিহ্য থেকে পেয়েছি। লেখার প্রেরণা তাদের থেকেই পেয়েছি। আমার বাবার বংশের লোকজনও লেখালেখিতে ভালো ছিলেন।
কর্মজীবনের এক পর্যায়ে ১৫/১৬ বছর মাসিক আত তাওহিদের সম্পাদকও ছিলাম। গতবছর পর্যন্ত এই দায়িত্ব আমি পালন করেছি।
যুগান্তর: অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে আপনি সরকারের অংশ হয়েছেন। এটি কীভাবে সম্ভব হলো?
আ ফ ম খালিদ হোসেন: এই দায়িত্বটা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার কোনো লবিং বা তদবির ছিল না। এটি একমাত্র আল্লাহ তায়ালার দয়া। দেশের বিভিন্ন ইসলামি দল এবং সামাজিক সংগঠন আমাার ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছে। উপদেষ্টা নিয়োগের যখন প্রক্রিয়া শুরু হলো তখন আলেমদের মধ্যে যাদের এই দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে সে তালিকায় আমার নামও ছিল। শেষ পর্যন্ত সবার সমর্থন আমি পেয়েছি। বিভিন্ন ইসলামিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সমর্থন ছিল বলেই আমি এই দায়িত্ব পেয়েছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। যারা আমাকে এই পদে বসানোর জন্য ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন এবং তাদের প্রতিও ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি যে, সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাব ইনশাআল্লাহ।
যুগান্তর: আপনার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে কি না?
আ ফ ম খালিদ হোসেন: আমার রাজনৈতিক একটি ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আমি জীবনে প্রথম ইসলামী ছাত্র সমাজ নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলাম। তখন আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ার ও মাস্টার্সে পড়ি। এটি ছিল নেজামে ইসলাম পার্টির একটি ছাত্র সংগঠন। পরে আমি নেজামে ইসলাম পার্টিতেও খুব সম্ভবত সহ-সভাপতি হিসাবে ছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমি চরমোনাই পির সাহেবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা নির্বাচিত হই।
যুগান্তর: আপনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনার কাজ করেছেন, গত এক যুগেরও অধিক সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগ, অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের কাজ বলতে গেলে থমকেই আছে, সে বিষয়ে আপনি কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন নানা কারণে বিগত ১৫/১৬ বছর ধরে অনকটা স্থবির হয়ে আছে। এটি মূলত প্রকাশনা, অনুবাদ, গবেষণা ও বিশ্বকোষ এই চার বিষয়ে বই বের করার প্রতিষ্ঠান। অথচ এই চারটি বিষয়ে বই বের করার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ঢেলে সাজাতে চাই। সেখানে যেসব বিষয় স্থবির হয়ে আছে এবং এ চার বিভাগ থেকে বই বের করার বিষয়টি অতি দ্রুত আমরা সচল করতে চাই।
এখানে অর্থের কোনো অভাব নেই শুধু উদ্যোগের অভাব। আর এই উদ্যোগটা আমরা নেব ইনশাআল্লাহ। আমাদের কিছু সমস্যা আছে, যেমন আমাদের পরিচালক কম। একটা মামলার কারণে আমরা প্রমোশন দিতে পারিনি বলে পরিচালক কম। মামলাটা যদি প্রত্যাহার করে নিতে পারি তাহলে নিচ থেকে প্রমোশন দিয়ে আমরা আরও পরিচালক নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের কাজের ক্ষেত্রে প্রাণবন্ততা ফিরে আসবে। নতুন যে ডিজি আসবেন তিনি আমার পরামর্শক্রমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যেই বিভাগগুলো আছে, সেগুলো ঢেলে সাজাবেন। ফাউন্ডেশনের অধীনে যত বিভাগ আছে সেগুলোর অচল অবস্থার নিরসন ঘটিয়ে আমরা এটিকে একটি প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে চাই এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই।
যুগান্তর: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে ইমাম প্রশিক্ষণের একটি প্রকল্প রয়েছে, কিন্তু দেশের বেশিরভাগ ইমাম এটির সঙ্গে যুক্ত নয়।
আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইমাম প্রশিক্ষণ বিভাগেও নতুন পরিচালক নিয়োগ করা হবে। কারো কোনো পরামর্শ থাকলে তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। আমার পরামর্শ চাইলে আমিও সেটা দেব। যদি কোথাও কোনো সমস্যা থাকে আমরা তা শতভাগ নিরসনের চেষ্টা করব। আর এই প্রশিক্ষণকে কিভাবে আরও ভ্যালিউবল ও জনবান্ধব করা যায় সেটিরও পরামর্শও সবার থেকে নেব। আমরা সেভাবেই কাজ করব ইনশাআল্লাহ।
যুগান্তর: চাঁদ দেখা নিয়ে প্রতিবছরই আলোচনা-সমালোচনা হয়, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই
আ ফ ম খালিদ হোসেন: আমরা চাঁদ দেখা কমিটিকেও পূনর্বিন্যাস করতে চাই। ঈদ এবং অন্যান্য ইসলামী যেই দিবসগুলো আছে, সেগুলো চাঁদ দেখার মাধ্যমেই শুরু হয়। এই কমিটিতে আরও স্কলার আমরা নিয়োগ করব। বিজ্ঞ মুফতিদের সহযোগিতা নেব এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে আকাশের গতিবিধি নিরূপণ করতে পারে এমনভাবে চাঁদ দেখা কমিটিকে সাজাবো।
এখানে একটি বিষয় হচ্ছে যে খালি চোখে চাঁদ দেখা। আরেকটি হচ্ছে আমাদের কাছে খবর আসতে দেরি হওয়ার কারণে ঘোষণা করতে দেরি হয়। মানুষ বলে যে অর্ধরাতে আপনারা ঘোষণা দিলেন। আমাদের দেশে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের আকাশ পরিষ্কার থাকে। যেমন পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা এ সব এলাকার ডিসিদের আমরা স্ট্যান্ডবাই হিসাবে রাখব। যেন তারা আমাদেরকে তাৎক্ষণিক সংবাদ দিতে পারে। আর যে সময় চাঁদ আকাশে থাকে তখন আমরা নামাজে থাকি। বের হয়ে যখন দেখি তখন তো আকাশে চাঁদ নাই। হয়তো চাঁদ উঠেনি বা চাঁদ ডুবে গেছে।
এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আলেম ও মুফতিদের পরামর্শে চাঁদ দেখার বিষয়টি আধুনিকায়ন করব। দেশের কোন কোন প্রান্ত থেকে চাঁদ দেখা যায় তা নির্ণয় করে চাঁদ দেখা কমিটিকে আধুনিক ও জনবান্ধব করা হবে ইনশাআল্লাহ।
যুগান্তর: বাংলাদেশে তিনলাখের বেশি মসজিদ রয়েছে। যেখানে জুমাসহ বিভিন্ন সময় মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে থাকেন। দেশের মসজিদগুলো নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
আ ফ ম খালিদ হোসেন: দেশের সব মসজিদ আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। চট্টগ্রামে দুটি, ঢাকা ও রাজশাহীতে একটি করে মসজিদ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এই চারটি মসজিদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া মডেল মসজিদগুলো আমরা পরিচালনা করে থাকি। জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নিয়ে কমিটি আছে। তো এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের মাধ্যমে চলে। এসব মসজিদের খুতবা যেন একটু ইউনিক হয় তার জন্য আমাদের নির্দেশনা আছে। তবে অন্যান্য মসজিদগুলোকে আমরা অনুরোধ করতে পারি- কিন্তু আদেশ দিতে পারিনা
যেহেতু অন্য মসজিদগুলো মানুষের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মসজিদ। এরপরও এই মসজিদগুলোকে ব্যবহার করে খুতবার মধ্যে সমাজবান্ধব বিভিন্ন ইস্যু আলোচনা করে জনগণকে ইসলামের দিকে আকর্ষণ করার প্রয়াস আমাদের ছিল এবং আগামীতেও থাকবে।
যুগান্তর: জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পরিবেশ নিয়ে মুসল্লিরা অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। দেশের জাতীয় মসজিদ হিসেবে এটি তেমন সংস্কার হয়নি। এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেবেন?
আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররম মসজিদের নিচে ও আশপাশে বিশাল মার্কেট রয়েছে। যার কারণে মসজিদের ভাবগাম্ভীর্য অনেকটা কমে গেছে। পাকিস্তানের কিং ফয়সাল, কুয়ালালামপুরের সেন্ট্রাল মসজিদসহ পৃথিবীর অনেক মসজিদে আমি গিয়েছি। সেখানে মসজিদের নিচে কোনো দোকান বা স্থাপনা নাই। পরিবেশবান্ধব বিশাল ফুলের বাগান এসব বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের সময় স্থাপন করা উচিত ছিল। এখন তো আর এসব করার সুযোগ ও জায়গা নেই। আর এখন চাইলেও দোকান বন্ধ করা যাবে না। তবে দ্রুতই আমরা বায়তুল মোকাররম মসজিদকে প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করব। যাতে মসজিদে ঢুকলেই মানুষের মনে একটা ধর্মীয় ভাবাবেগ জেগে উঠে। এমন একটি প্রকল্প দ্রুতই আমরা শুরু করব।
অর্থাৎ মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে কিভাবে আরও সৌন্দর্যবর্ধন করা যায়, সেটি করা হবে। যাতে করে মসজিদের পবিত্রতা অনুভব হয়। বায়তুল মোকাররমে প্রবেশ করলেই যেন মানুষের মন ইবাদতের প্রতি আকৃষ্ট হয় এমন একটি প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি এবং এটা বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ।
যুগান্তর: বায়তুল মোকাররমের খতিবকে নিয়ে একটি বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসাবে মাওলানা রুহুল আমিন সাহেব এতদিন ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আর নামাজ পড়াতে আসেননি। অসুস্থতার কথা জানিয়ে আমাদের কাছে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির দরখাস্ত দিয়েছিলেন। এ পদ খালি হলেই আমরা নতুন কাউকে নিয়োগ করব। আপাতত আমরা চারজন ইমামকে ভাগ করে দিয়ে বায়তুল মোকাররমে নামাজ চালু রাখার ব্যবস্থা করেছি।
মাওলানা রুহুল আমিনের নিয়োগপত্রও ত্রুটিপূর্ণ। সেখানে লেখা আছে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। অতিদ্রুত আপনি আপনার কর্মস্থলে যোগদান করবেন। ’ কিন্তু কতদিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার সময়সীমা নিয়োগপত্রে লেখা নাই। এবং কি শর্তে নিয়োগ সেটিও উল্লেখ নাই। এসব বিষয় তো নিয়োগপত্রে লেখা থাকে। সুতরাং এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ।
যুগান্তর: আওয়ামী সরকারের প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদ্রাসা কি চলমান থাকবে?
আ ফ ম খালিদ হোসেন: হ্যাঁ, যেহেতু এ প্রকল্পে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী যুক্ত রয়েছেন তাই এ মাদ্রাসাগুলো চালু থাকবে। কিভাবে এই মাদ্রাসাগুলোকে আরও জনসম্পৃক্ত করা যায় সেটির চেষ্টাও করা হবে।
বাকী অংশ দ্বিতীয় পর্বে
অনুলিখন: কাজী ইনজামামুল হক