Logo
Logo
×

জাতীয়

আরাকান আর্মির হাতে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

আরাকান আর্মির হাতে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

বাংলাদেশ সার্বভৌমত্বের শত্রু সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি কর্তৃক চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইউনাইটেড ইয়ূথ মুভমেন্ট বাংলাদেশ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। 

শুক্রবার জুমার নামাজের পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওই মানববন্ধন করা হয়েছে।

মানববন্ধনে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক এলাহী বলেন, আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়ায় এমন একটি জাতি রয়েছে, যারা প্রায় শত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। যাদের নাম চির নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের আরাকান রাজ্য তাদের আদি নিবাস। অথচ আজ নিজ দেশেই তারা অবাঞ্চিত। কেবল মুসলিম হওয়ার অপরাধেই, শত বছর আগে থেকে তাদের উপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছে, তা আজও থামেনি। শিক্ষা-দীক্ষা ও নিজ ধর্ম পালনের অধিকার থেকে শুরু করে সব ধরনের নাগরিক ও মানবিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হতে কোণঠাসা হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ আজ নিকষ কালো আঁধারে মিশে গেছে।

তারা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতিগত নিধনের শিকার হওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঐতিহ্যবাহী আরাকান রাজ্যকে রোহিঙ্গাশূন্য করে ফেলা। সেই ধারাবাহিকতায় আজও আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর বিরামহীন নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও লুটপাট চলছে অহরহ। গত একশত বছরে আরাকান রাজ্যে কী পরিমাণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই।

তারা আরও বলেন, বিগত ২০১৭ সালে মায়ানমারের রোহিঙ্গাবিদ্বেষী জান্তা বাহিনী ও মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির পরিচালিত সম্মিলিত গণহত্যায় ৩৬ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মা-বোনকে ধর্ষণ করা হয়। সেই বর্বরতম গণহত্যা থেকে বাঁচতে সেসময় প্রায় ১ মিলিয়নেরও অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালের সেই বিভীষিকাময় রোহিঙ্গা গণহত্যায় যে সন্ত্রাসীরা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল, তারাই হলো আজকের আরাকান আর্মি। আর এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পূর্বসূরিরাই ছিল সেই কুখ্যাত মগ জলদস্যু, যারা বিগত কয়েকশ বছরে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ও বাঙ্গালী জেলে ও ব্যবসায়ীদের কিডন্যাপ করে বিভিন্ন দেশে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। সেই শত শত বছর আগে থেকেই এই মগ সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন করার মাধ্যমে আরাকান রাজ্যকে রোহিঙ্গাশূন্য করার ভয়াবহ চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। সেই মগ জলদস্যুদের উত্তরসূরি হিসেবে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিও আজ একই কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি তাদের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আরাকান থেকে জোরপূর্বক হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করে চলেছে প্রতিনিয়ত। যে কারণে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে সীমান্তে ভিড় করছে, অথচ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কখনোই চায় না যে, তারা বাংলাদেশে থাকুক। তারা প্রত্যেকেই নিজ ভূমি আরাকানে সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে ফিরে যেতে চায়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৪৮টিরও অধিক রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। যার ফলে আরাকানে ১,৭০,০০০ থেকে ১,৮০,০০০ নতুন বাস্তচ্যুত মানুষ তৈরি করেছে। এছাড়াও এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পাঁচ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে এই স্বল্প সময়ে। গতমাসের ৪ ও ৫ তারিখে আরাকানের মংডু শহরে ড্রোন এ্যাটাক চালিয়ে ২০০ এরও অধিক রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে। সেইসঙ্গে অগণিত রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে এই সন্ত্রাসীরা।

বক্তারা আরও বলেন, গণহত্যা ও ধর্ষণের পাশাপাশি সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বিগত ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নিরীহ রোহিঙ্গাকে আন্তর্জাতিক মানবপাচার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিয়েছে। আরও ভয়ানক ব্যপার হচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইয়াবা পাচারের মূল কারিগর হলো এই আরাকান আর্মি। 

ড্রাগ কন্ট্রল অথোরিটি অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, বাংলাদেশে তারা প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করে থাকে, যার ফলে আমাদের সমাজের তরুণ–যুবকরা ইয়াবার প্রতি আসক্ত হয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়াও মেথামফেটামিন ও আফিমের মতো ভয়ানক মাদকদ্রব্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের মাধ্যমে এই আরাকান আর্মি লক্ষ লক্ষ ডলার আয় করছে, আর আমাদের সমাজ তার মূল্য দিয়ে যাচ্ছে অবক্ষয়ের মাধ্যমে।

তারা বলেন, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বাংলাদেশে কেবল মাদক পাচার করেই থেমে যাচ্ছে না, বরং তাদের পরিকল্পনা আরও অনেক গভীরে। আরাকানের পুরো অঞ্চল দখল করে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপথগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করাও তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বলতে চাই, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বর্তমানে উপজাতিদের থেকে নিয়মিতভাবে সৈন্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। এটি আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য অনেক বড় অশনি সংকেত। আমরা এভাবে চলতে দিতে পারি না।

তারা আরও বলেন, আমাদের মাতৃভূমির এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে আমরা কেউ চুপ থাকতে পারি না। ‘বাঙ্গালী সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে নির্মূল করতে থাকলে এক সময় পুরো আরাকান তারা দখলে নিয়ে নিবে। আর এমনটি হলে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আর কখনো নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে না বলে আমরা গভীরভাবে শঙ্কিত।

তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করতে হবে এবং তারা যাতে আমাদের দেশের পার্বত্য চট্রগ্রাম এলাকায় কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাতে না পারে সে ব্যপারেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইসঙ্গে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে করে সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

মানববন্ধনে এ সময় আরও বক্তৃতা করেন ইউনাইটেড ইয়ূথ মুভমেন্ট বাংলাদেশের

সভাপতি মু. দ্বায়ীফ সলেমুন, প্রচার সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম