Logo
Logo
×

জাতীয়

সরকারি প্রকল্পে হরিলুট, শতকোটি টাকার মালিক জহিরুল

Icon

মুহাম্মদ আবুল কাশেম, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ এএম

সরকারি প্রকল্পে হরিলুট, শতকোটি টাকার মালিক জহিরুল

জহিরুল ইসলাম

নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে এক কাপড়ে এসে বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদ লামায় ঠাঁই নিয়েছিলেন সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম। এর পরে তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে জহিরুল ইসলাম দুই মেয়াদে লামা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হয়েই সরকারি বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাট করে হাতিয়া থেকে আসা সেই জহিরুল এখন শতকোটি টাকার মালিক।

স্থানীয়রা বলছেন, একদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অন্যদিকে মেয়র। এই দুই ক্ষমতার প্রভাবে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব ক্যাড়ার বাহিনী। ভয়ে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদের সাহস করত না। তাই জহিরুলের একক আধিপত্যে চলত পুরো লামা উপজেলা।

পৌরসভার বিভিন্ন বরাদ্দের নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লামা পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একযোগে ৯টি প্যাকেজে প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এ কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নজিরবিহীন লুটপাট অনিয়ম দুর্নীতি করে বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকা মেরে দিয়েছেন সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট (এলজিসিআরপি) থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দ থেকেও তিনি লাখ লাখ টাকা পকেটে পুরেছেন।

পৌরসভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জহিরুল ইসলাম খাদ্যশস্যের ২০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ‘লামা মুখ বাজার হতে মাইন উদ্দীনের বাড়ি অভিমুখী রাস্তায় মাটি ভরাট ও এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন, কলিঙ্গাবিল দক্ষিণ পাড়ার কামাল মাঝির বাড়ি অভিমুখী রাস্তায় মাটি ভরাট ও এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন, পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সেলাই মেশিন বিতরণ, প্রান্তিক চাষিদের কৃষি উপকরণ বিতরণ, লামা মুখ সড়কে সৌন্দর্য বর্ধনে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, নুনারবিল সরকারি মড়েল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে ফুল গাছের চারা রোপণ ও টাইলসসহ টব স্থাপন, কুড়ালিয়ারটেক জামে মসজিদের উন্নয়ন, পৌর এলাকার বিভিন্ন ক্লাব প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ শিলেরতুয়া বৌদ্ধবিহারের উন্নয়ন, চাম্পাতলী মাঝি পাড়া ও গুলির মাঠের পাড়ার রাস্তা সংস্কার এবং মাটি ভরাট, লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরের উন্নয়ন।

লাইনঝিরি প্রাথমিক বিদ্যালয় অভিমুখী রাস্তার পাশে ড্রেনের মাটি অপসারণ ও রওজাঝিরি রাস্তা এইচবিবিসহ সংস্কার, কাটা পাহাড় ও কাশেম মিস্ত্রি পাড়ার রাস্তার মাটি অপসারণ এবং মেরামত, মধুঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন মাঠ মাটি ভরাট এবং নূরানী মাদ্রাসার উন্নয়ন, পৌরসভা কার্যালয়ে সৌন্দর্য বর্ধনে ফুল গাছের চারা রোপণ, লামা বাজারের বিভিন্ন গলি ও পাড়ায় ডাস্টবিন স্থাপন, নয়াপাড়া ইসহাকের বাড়ি হতে আমিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, কলিঙ্গাবিল বেলায়েতের বাড়ি হতে জাফর সর্দারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধবিহারের উন্নয়ন, পৌর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহ।’ প্রতিটি প্রকল্পের জন্য তিনি সাড়ে ৭ টন চাল এবং আড়াই টন গম বরাদ্দ পেয়েছেন। এসব প্রকল্প শুধু কাগজকলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। এসব বরাদ্দের চাল এবং গম বিক্রি করে তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু এসব প্রকল্প লুটপাটে সীমাবদ্ধ নয়, তার অনিয়ম দুর্নীতি। মেয়র থাকাকালীন সরকারি বরাদ্দে লুটপাট করেছেন যা নজিরবিহীন। এভাবে দুই মেয়াদে মেয়র হয়ে সরকারি বরাদ্দ লুটপাট এবং কমিশন বাণিজ্য করে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জহিরুল ইসলাম নিজের এবং স্ত্রীসহ নামে বেনামে শতকোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। তিনি লামা প্রেস ক্লাবের পাশে কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট কিনেছেন। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজের পাশে নিজ এবং ভাইয়ের নামে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে কিনেছেন চারটি বাজার প্লট। পর্যটন স্পষ্ট মারাইংচা হিলে রয়েছে স্ত্রীর শেয়ার। মুধুরঝিরি এলাকায় গড়ে তুলছেন কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন ফ্ল্যাট। এছাড়া মারাইংচা এলাকায় তার স্ত্রী, শ্যালক ও ভাইয়ের নামে কিনেছেন প্রায় ৮০০ একর জমি।

নির্বাচনি হলফনামায় মেয়র জহিরুল ইসলাম এবং তার স্ত্রীর নামে স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমানে তার এবং তার স্ত্রীর হলফনামা দেওয়া সম্পদ থেকে হাজার গুণ সম্পদ বেড়েছে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে বার্তা পাঠানো হলে, তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে রাজি হন। পরে তার নানা অনিয়মের প্রসঙ্গ তোলা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে হয়রানি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম