প্রতীকী ছবি
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের থেকে একে একে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট আর টাকা পাঁচারের অবিশ্বাস্য সব তথ্য। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় রকমের দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, যাদের তৎকালীন সরকারের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
এদের মধ্যে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, নাসা গ্রুপসহ আরো কয়েকটি বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠির নাম বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব ব্যবসায়ীক গোষ্ঠি শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছেন। একই সঙ্গে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির জোরালো অভিযোগও উঠেছে।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য যতই প্রকাশ্যে আসছে ততই জোরালো হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি। এরই মধ্যে হাসিনা সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে এখন প্রশ্ন উঠছে রাষ্ট্র কখন সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে। চলুন জেনে নেই বিষয়টি সম্পর্কে।
সম্পদ বাজেয়াপ্ত কী
সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা একটি বহুমুখী আইনি ধারণা যা অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত বলে বিশ্বাস করা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা জড়িত। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি দ্বারা শুরু হয় এবং নগদ, যানবাহন, রিয়েল এস্টেট এবং এমনকি ডিজিটাল সম্পদ সহ বিস্তৃত সম্পত্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল অপরাধমূলক উদ্যোগগুলোকে তাদের অর্জিত লাভ থেকে বঞ্চিত করে ব্যাহত করা এবং বাধা দেওয়া।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, কোম্পানি দুর্নীতি করতে পারে না, দুর্নীতি করে মানুষ। অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি প্রমাণ হয় না, দুর্নীতি আদালতে প্রমাণ করতে হয়।
২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের উদাহরণ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে কিছু প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, অনেক কোম্পানির পাবলিক শেয়ার থাকে, প্রচুর মানুষের অংশগ্রহণ থাকে, কিছু মানুষের জন্য যখন কোম্পানিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, সাধারণ গ্রাহকরা তখন খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কোম্পানিগুলোকে চলতে দিতে হবে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইভ্যালির প্রতারণার জন্য দুইজনকে জেলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইভ্যালিকে বন্ধ করা হয়নি বলে গ্রাহকরা এখন কিছু কিছু টাকা পাচ্ছে।
আহসানুল করিম বলেন, একটি কোম্পানিতে মালিকের সংখ্যা একাধিক থাকতে পারে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হবে, সেই ব্যক্তির মালিকানার অংশটুকু আদালত বাজেয়াপ্ত করে। সেক্ষেত্রে বাজেয়াপ্ত করা সম্পদ রাষ্ট্রের অধীনে চলে যায়।
কোম্পানির মালিকদের অপরাধের ধরণ অনুযায়ী মামলা কিংবা সাজার বিধান রয়েছে দেশের আইনে। আইনজীবীরা বলছেন সব অপরাধের ক্ষেত্রে সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়না। এক্ষেত্রে জেল জরিমানার বিধানও আইনে রয়েছে বলে আইনজীবীরা উল্লেখ করেন।
তদন্ত প্রক্রিয়া কী
আইনজীবীরা বলছেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হয়েছে কী না সেটি নির্ণয় করার জন্য বিভিন্নভাবে তদন্ত হতে পারে।
দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ, কর ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচার – এসব বিষয় নিয়ে সাধারণত কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত হয়।
শিহাব উদ্দিন খান বলেন, আমাদের দেশের দুর্নীতিলব্ধ সম্পদ তদন্ত করার একক এখতিয়ার দুদকের। ব্যক্তির কাছে দুর্নীতির তথ্য থাকলে তিনি দুদককে জানাতে পারেন। কিন্তু নিজ উদ্যোগে কেউ কিছু করতে পারে না। দুদক অভিযোগ না নিলে স্পেশাল কোর্টে অভিযোগ দায়ের করতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশন যখন কোনো দুর্নীতির মামলা করে সেখানে তারা কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
দুদকে মামলা হওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হল, প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধান করা, দুদক আইন অনুযায়ী প্রমাণ পেলে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। দুদকের মামলা স্পেশাল আদালতে যায়, সেখানে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল হয়, পরে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়
সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবীর মতে, আমাদের ট্র্যাডিশনাল ফৌজদারি ব্যবস্থায় একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার ভোগান্তি তো আছেই। ভুক্তভোগী সবাই। কিন্তু দুদকের যেহেতু এ সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের একক এখতিয়ার, তাদের এর বাইরে অন্য কাজ নাই; সেক্ষেত্রে ওনারা প্রাথমিক তদন্ত দ্রুত করলে আদালতে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে। তখন এটি দ্রুত করা সম্ভব। কিন্তু যেহেতু এটা সম্পদের বিষয়, অনেক প্রমাণের বিষয়, কিছুটা সময় দরকার বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা