Logo
Logo
×

জাতীয়

আজ খুলছে সব শিল্পকারখানা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯ এএম

আজ খুলছে সব শিল্পকারখানা

ছবি: সংগৃহীত

শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বুধবারও গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল। এর পেছনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ইন্ধন রয়েছে। কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। সচিবালয়ে এই হুঁশিয়ারি দেন তারা।

অন্যদিকে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নিরাপত্তা সাপেক্ষে বৃহস্পতিবার পূর্ণোদ্যমে কারখানা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌথ অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। বুধবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে গার্মেন্ট মালিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিক্ষোভের কারণে বুধবার ১৬৭টি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কারখানার অভ্যন্তরীণ সমস্যা খুবই কম। বহিরাগতরা বিক্ষোভ করছে, ভাঙচুর চালাচ্ছে, তারা পরিচিত নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চিহ্নিত করার আশ্বাস দিয়েছে। তাদের আশ্বাসে বৃহস্পতিবার থেকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর নয়। এ সুযোগে সবাই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিক্ষোভ শুধু তৈরি পোশাক নয়, অন্যান্য শিল্পেও ছড়িয়ে পড়েছে। ৫০-৬০ জন বহিরাগত লোক এসে হামলা করে গেট ভেঙে দিচ্ছে। এই গ্রুপে কিশোর গ্যাং, টোকাইসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছে। অনেক কারখানায় স্বেচ্ছাসেবীরাও নিরাপত্তার কাজ করছেন।

কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি : বুধবার সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেন, চারদিকে যে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে, বিশৃঙ্খলা হচ্ছে-এসব বিশৃঙ্খলা শ্রমিকরা করছে না। যারা করছেন তাদের অধিকাংশই বহিরাগত। তাদের মোকাবিলা করতে আমাদের একটু কঠিন হতে হবে। আমরা মনে রেখেছি, সরকার কোনো সময় তার নাগরিকের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করবে না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছু সংখ্যকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সে ব্যাপারে আমাদের আলোচনা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিষয়ে আরও চিন্তাভাবনা করতে হবে। তারা গ্রেফতার কিংবা আটক হতে পারেন। ৫০ জন রাস্তায় বসে পড়লে পাঁচ লাখ মানুষের অসুবিধা হবে। কাজেই তাদের সরাতে যদি বলপ্রয়োগ করতে তাই করা হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আমরা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে একাধিক সভা করেছি।  শ্রমিক নেতারা বলেছেন, এখন যে আন্দোলনগুলো হচ্ছে-শ্রমিক নেতারা এ আন্দোলনের প্রকৃতিটা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ এখানে কোনো নির্দিষ্ট দাবি উঠে আসছে না। কোনো নির্দিষ্ট দফা পাওয়া যাচ্ছে না।

আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রমিক নেতারাই আমাকে বললেন যে তারা সেখানে হেঁটে এসেছেন এবং তারা দেখেছেন যে, আন্দোলনকারীরা হেলমেট ও হাফপ্যান্ট পরা যারা টোকাই, যাদের টাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য ভাড়া করা হয়। তাদের সেখানে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগও আছে কিছু জায়গায়। স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাও রয়েছেন বলে আমরা সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে কথা হচ্ছে। তারা যাতে তাদের নিবৃত রাখেন। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী যেসব আওয়ামী লীগ নেতা এখনো রয়ে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে যাব। উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হবে। সেখানে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

গাজীপুরে শিল্পকারখানায় বিক্ষোভ : বেতনবৈষম্য দূরসহ নানা দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে নৈরাজ্য, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে বাসন থানাধীন স্কয়ার, ক্লোসাস, নেটওয়ার্কসহ বেশকিছু পোশাক কারখানায় বহিরাগত শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে কারখানা কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণা করেন। 

টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে কিছু লোক শ্রমিকদের ব্যবহার করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। অনেক গার্মেন্ট কারখানা ভাঙচুর করা হয়েছে। জোর করে শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বাধ্য করছে। এসব নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে অনেক কারখানা মালিক ও প্রশাসনের লোকজন আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। তাই আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে টঙ্গীতে সৃষ্ট নৈরাজ্যের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে পাহারা বসিয়েছি। 

এদিকে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেডের সামনে চাকরি প্রত্যাশী শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রেপুর এলাকায় ইউনি হেলথ্ ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি ওষুধ উৎপানদকারী প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। এ সময় তারা বেতন বৈষম্যসহ দূর করাসহ কয়েকটি দাবি জানান। এছাড়াও সকাল ৬টায় শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিকের ফ্যাক্টরী থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। সকাল ৭টায় তারা কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারী শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি পূরণে আশ্বস্ত করলে বেলা ১১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজে ২০ দফা দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন করে আসছিল শ্রমিকরা। বুধবার সকালেও তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, ৫ তারিখে মধ্যে বেতন প্রদান, নারী শ্রমিকদের নৈশকালীন ডিউটি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানিয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, বিসিকে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সরব থাকায় বুধবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর শ্রীপুর ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক জানান, বুধবার সকাল থেকেই কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। পরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর অংশে যান চলাচল পুরোদমেই স্বাভাবিক ছিল। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম