দাবদাহে তাপমাত্রা ছাড়াও ঝুঁকির যেসব কারণ থাকতে পারে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এখন গ্রীষ্মের প্রভাবই বেশি। বছরের বেশিরভাগ সময়ই তীব্র গরমে কষ্ট করতে হয় মানুষকে। এর মধ্যে প্রায়শই দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে যায় মানুষের। তবে গবেষণা বলছে, দাবদাহে তাপমাত্রাই একমাত্র স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ নয়। দাবদাহের সঙ্গে আরও নানা কারণ বাড়িয়ে তুলতে পারে মৃত্যুঝুঁকি। ডয়চে ভেলে তাদের এক প্রতিবেদনে দিচ্ছে এমন তথ্য।
গবেষকরা বলছেন, দাবদাহ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। তবে শুধু উচ্চ তাপমাত্রাই নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়াদিও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দাবদাহের প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে জানান মাদ্রিদের কার্লোস ৩ হেলথ ইনস্টিটিউটের গবেষক জুলিও ডিয়াজ।
এই গবেষকের মতে, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দাবদাহের প্রভাব শুধু উচ্চ তাপমাত্রাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব বোঝা যেতে পারে মানুষের আয়ু, বয়স, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং গরমের সময়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করছে তার ওপর।
গবেষণায় স্পেনে দাবদাহের প্রভাব ব্যাখ্যা করে এই গবেষক বলেন, ‘আমরা স্পেনকে ১৮২ অঞ্চলে ভাগ করে দেখেছি— তাপমাত্রা কতে ডিগ্রি হলে মানুষ মারা যায়। আমরা দেখলাম, সোভিয়েতে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে দাবদাহ বলা যাচ্ছে না। আবার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কোরুনাতে ২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রাই দাবদাহ।’
তিনি আরও জানান, ‘দাবদাহের সময়ে তিন ভাগ মানুষ হিটস্ট্রোকে মারা যান। তাপমাত্রা শরীরের অন্যান্য রোগকে প্রভাবিত করে, যার ফলে মানুষের মৃত্যু হয়।’
এই গবেষক আরও জানান, দাবদাহের প্রথম ধাপে দ্বিতীয় ধাপের তুলনায় বেশি মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে থাকে। কারণ প্রথম ধাপে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়া দ্বিতীয় ধাপে এই সংখ্যা কমে আসে। তৃতীয় ধাপে তা আরেও কমে আসে। আর এ কারণে দাবদাহের প্রথম পর্বে বেশি মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।
মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দাবদাহের প্রভাব বিশ্লেষণ করে এর সঙ্গে আর্থ-সামাজিক সম্পর্কের বিষয়টিও দেখতে পান এ গবেষক। তার মতে, দরিদ্র এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব বেশি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তিনজনের একটি রুমে যেখানে মাত্র একটি জানালা রয়েছে এবং কোনো এয়ারকন্ডিশন বা ফ্যান নেই, সেই রুমে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব যেই ভিলাতে একটি সুইমিংপুল আছে সেখানকার চেয়ে বেশি। আবার এটি শুধু এয়ারকন্ডিশন বা ফ্যান থাকা না থাকর চেয়ে সেটি চালাতে পারার সক্ষমতার ওপর নিভর করে। দাবদাহের সময়ে স্পেনে বিদ্যুতের দাম আকাশচুম্বী হয়েছিল।’
তিনি জানান, হিটস্ট্রোক তখনই হয়, যখন কোনো ব্যক্তি এমন তাপমাত্রায় থাকেন, যেই তাপমাত্রা তার শরীর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সূর্যের নিচে শারীরিক অনুশীলন করলে এবং শরীর যদি তাপমাত্রাকে ৩৭ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনতে না পারে তাহলে ঝুঁকি তৈরি হয়।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আপনার শরীর যখন তাপমাত্রাকে ৩৭ ডিগ্রিতে ধরে রাখতে না পারে, তখন আপনার মস্তিষ্কসহ শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।’
উল্লেখ, ২০০৩ সালে ইউরোপে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবদাহের ঘটনা ঘটেছিল। সেবার ১৫ দিনে দাবদাহে ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। তবে এই গবেষকের মতে, মানুষ আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত দাবদাহের ওপরের প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রায় স্পেনে মৃত্যুর হার ১৪ ভাগ বেড়েছিল। আর ২০০৩ সালের পর এটি ৩ ভাগের বেশি বাড়েনি।
মানুষ কীভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে এই গবেষক জানান, মাদ্রিদের মতো শহরে আগে কখনো (গরমের সময়) প্রবীণদের শর্টস পরে বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। কিন্তু এখন দেখা যায়, তারা সবাই শর্টস পরে, মাথায় একটি টুপি দিয়ে, হাতের পানির বোতল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছে।