বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দুই কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তার মধ্যে একজন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) প্রশাসন বিভাগের উপ-পরিচালক আমজাদ হোসেন নিপু এবং অপরজন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স (ইঅ্যান্ডও) বিভাগের উপ-পরিচালক মাহদী আহমেদ।
রোববার সন্ধ্যায় কমিশনের প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবির মুখে এ দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।
যদিও তাদের দাবি অনুযায়ী চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও পদত্যাগের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করেন প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
এ সময় চেয়ারম্যানসহ ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল হক এবং কমিশনার দেলোয়ার হোসাইন কার্যালয়ে ছিলেন না। তবে অন্য দুই কমিশনার প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ (স্পেকট্রাম) এবং ড. মুশফিক মান্না চৌধুরী (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) কমিশনে উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ এবং তার ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) আমজাদ হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বিটিআরসিতে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে বিটিআরসিতেও ব্যাপক দলীয়করণ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন। এসব কাজে তাদের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণাধীন ইঅ্যান্ডও বিভাগের উপ-পরিচালক মাহদী আহমেদ।
বিক্ষোভের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী একই বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আমীন বলেন, ব্যাপক দুর্নীতি, দলীয়করণ এবং স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। এ কাজে তাদের সহযোগী ছিলেন আমজাদ এবং মাহদী। চেয়ারম্যান বুয়েটে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং আমজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তাদের কারণে অনেক মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা তাদের পদত্যাগ চাই।
এ সময় তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান আজ (রোববার) অফিসে আসেননি এবং তার পিএস আমজাদ পালিয়েছে। মাহদীকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। পদত্যাগ না করলে তাকে ছাড়া হবে না।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল হক জানান, চেয়ারম্যান ডায়রিয়াজনিত কারণে অসুস্থ বলে তাকে জানিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল হক জানান, উপদেষ্টা মহোদয়ের সভায় বিটিআরসির প্রতিনিধিত্ব করতে সকাল থেকে সচিবালয়ে ছিলাম। সভা শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে বিষয়টি জানতে পারি।
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, যেহেতু সবার একটা সেন্টিমেন্ট (অনুভূতি) আছে, সেটাকে একেবারে অবহেলা করা যায় না। তাদের সেই সেন্টিমেন্ট কিভাবে প্রশমিত করা যায়, সেজন্য বিধিমালা দেখছি। বিধিসম্মত এবং সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
এদিকে এমন প্রেক্ষাপটে রোববার সন্ধ্যায় ওই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পৃথক পৃথক অফিস আদেশ জারি করেছে বিটিআরসি।
কমিশনের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক আফতাব মো. রাশেদুল ওয়াদুদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ দুটিতে বলা হয়, উক্ত কর্মকর্তার (আমজাদ ও মাহদী) বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায় অসাধু সিডিকেটে জড়িত থেকে দুর্নীতি করেছেন মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় এবং কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে নিপীড়ন ও নিষ্পেষনের প্রেক্ষিতে তাকে বিটিআরসি চাকরি প্রবিধিমালা ২০২২ বিধি-৪৮ ও ৫৪ ধারা এবং সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ), (ঘ), (ই) ও বিধি-১২ (১) অনুযায়ী কমিশনের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।