Logo
Logo
×

জাতীয়

৩ হাজার প্রকল্পের ভাগ্য অনিশ্চিত

Icon

হামিদ-উজ-জামান 

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৫ পিএম

৩ হাজার প্রকল্পের ভাগ্য অনিশ্চিত

ফাইল ছবি

আর্থিক সংকটে এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা চলছে। এবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে নতুন করে সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নেওয়া চলতি অর্থবছরের এবং আগামীর সম্ভাব্য মিলে মোট ৩৩২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এগুলোর মধ্যে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ১২২১টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা। তিনটি মেট্রোরেলসহ শুধু মেগা ১০ প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান প্রকল্পগুলো বন্ধ করা হলে দেশের লাখ কোটি টাকার অপচয় হবে। এ অবস্থায় পুরোনোগুলোর বাস্তবায়ন এবং নতুনগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ আছে এমন প্রকল্পের বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ঢালাওভাবে চলমান প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ অনেক হলেও সময় কম। যেমন সবচেয়ে বড় গুরুত্বের জায়গা হলো নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কার এবং একটি জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সেখানে হয়তো সব প্রকল্প চলমান রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে পর্যালোচনা করে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলমান রাখতে হবে। নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে তাদেরও নিজস্ব প্রায়োরিটির জায়গা আছে। সুতরাং চলমান প্রকল্পগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে প্রকৃত প্রয়োজন হলে বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা-এ বিষয়ে কথা হয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশ আমাদের কাছে কোনো বার্তা দেয়নি। আমরা ঋণ নিয়েছি। অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়নও এগিয়েছে। এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করবে পরবর্তী সরকার। এরপর যে সরকার আসবে সেখান থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে সেভাবে আমরা নেগোসিয়েশন করব। নতুন সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবেই কাজ হবে। এখানে উন্নয়নস হযোগীদের পক্ষ থেকে বলার বিষয় নয়।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প আছে ১৩২১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১১৩৩টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প ২১টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হয়েছে ১২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প আছে ৬০টি। এছাড়া এ অর্থবছরের এডিপিতে নতুন কিছু অনুমোদন ও বরাদ্দহীন প্রকল্প যুক্ত হয়েছে ৯২১টি। বৈদেশিক অর্থ পাওয়ার সুবিধার্থে অনুমোদনহীন নতুন ২৫৭টি প্রকল্প এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্প আছে ৮০টি। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প থাকছে ৪৭টি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্প থাকছে ৩০০টি। এছাড়া গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ছিল এবং গত জুন মাসের মধ্যে মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন ৩৯৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে স্থানান্তর হয়েছে তারকা চিহ্ন দিয়ে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ যুগান্তরকে বলেন, এসব প্রকল্প আওয়ামী লীগের কিনা এটার চেয়ে বড় কথা হলো এগুলো সরকারের প্রকল্প। ওই সরকার যেসব খাতে গুরুত্ব দিয়েছিল সে অনুযায়ীই প্রকল্প এবং বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়। এখন নতুন সরকার এলে তারা তাদের মতো প্রায়োরিটি ঠিক করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবার আগে দেখতে হবে প্রয়োজনের বিষয়টি। অর্থাৎ চলমান প্রকল্পগুলোতে প্রচুর অর্থ ও সময় বিনিয়োগ হয়েছে। এসব প্রকল্প মাঝপথে বা শেষদিকে এসে বন্ধ করে দিলে অপচয় ও ক্ষতিই বেশি হবে। তবে নতুন প্রকল্পের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যে সরকারই আসুক না কেন, সবার আগে ভাবতে হবে দেশ ও জনগণের প্রয়োজন। তাহলেই কোনো অনিশ্চয়তা বা শঙ্কা থাকবে না।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া মেগা প্রকল্পের কয়েকটি হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাদ্দ ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এটিতে রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণ আছে। ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ৬৪ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। এছাড়া মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পে বরাদ্দ ১৯৭৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ১৯৪২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫৮৫ কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-৫, নর্দান রুট প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৯৬৮ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৩০০ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর জন্য বরাদ্দ ২৫৬০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে জাপানসহ বিভিন্ন সংস্থার ঋণ রয়েছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৫৪৪ কোটি টাকা, এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৮,৪৯৮ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে চীন। দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেললাইন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ১৪৫৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭১৭২ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে চীন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ রয়েছে। আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্প : এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম