Logo
Logo
×

জাতীয়

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০০ এএম

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা গেছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা না থাকায় তারা যানজট নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সড়কে যানজট কমাতে অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য কয়েকটি লেনে ভাগ করে দিয়েছেন তারা। মোটরসাইকেল চালাতে হেলমেট পরতেও বাধ্য করা হচ্ছে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জঞ্জাল পরিষ্কার রাখতে দলবেঁধে কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক ঘুরে শিক্ষার্থীদের এমন তৎপরতা দেখা গেছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে তারা আর কাজে ফেরেনি। ফলে রাজধানীর সড়কগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠলে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজে নেমে পড়েন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় দেখা যায়, বাসের সংখ্যা বেশি না হলেও আগের তুলনায় যান চলাচল বেড়েছে। বনানীমুখী পরিবহণগুলোকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে যেতে সাহায্য করছেন শিক্ষার্থীদের একটি দল। তারা বাসগুলোকে যথাস্থানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করতে অনুরোধ করছেন। সড়কের অপর পাশে বিমানবন্দরমুখী পরিবহণগুলোকে যেতে একইভাবে কাজ করছেন শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল। দুপুর পৌনে ২টায় যাত্রীবাহী বাস স্টপেজে দাঁড়াতে সাহায্য করার সময় ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহণের একটি বাস আপন নামে এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেয়। এতে পায়ে ও মাথায় আঘাত পান তিনি। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় অন্য শিক্ষার্থীরা। 
ঘটনাস্থলে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মন্থন বলেন, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় আমরা দায়িত্ব নিয়ে সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি। এরইমধ্যে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের একজনকে ধাক্কা দেয়। পরে আমরা বাসটি আটক করি এবং চালক ও হেলপারকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিই।

এছাড়াও প্রগতি সরণি এলাকা, কাওরানবাজার ও ডেমরাসহ রাজধানীর সব এলাকার সড়কে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের তৎপরতা। এর পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন, সড়কের আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। গণভবনের সামনে, শিয়া মসজিদ মোড়ে, টিএসসি এলাকা, মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর ১২ নম্বরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

এদিকে রাজধানীর ডেমরা থানা ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনসহ সমাজের সচেতন স্বেচ্ছাসেবীরা রাতেও এলাকা পাহারায় নেমেছেন। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই দুর্বৃত্তরা লুটপাট, হামলা ও ভাঙচুর চালাতে থাকে বিভিন্ন জায়গায়। স্থানীয় কাউন্সিলর ইব্রাহীম খলিল বলেন, ইতোমধ্যে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় গত ৫ আগস্ট থেকেই আমি ও নেতাকর্মীরা সারারাত জেগে এলাকায় পাহারা বসিয়েছি। মন্দিরে মন্দিরে পাহারা চলছে যা আরও বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে সহিংসতা প্রতিরোধে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। 

ডেমরা ট্রাফিক জোনের ইন্সপেক্টর (টিআই) মৃদুল কুমার পাল বলেন, আমাদের পুলিশ বক্স ভেঙে সব মালামাল লুটপাট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জানমালের নিরাপত্তা নেই। তারপরও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে আমরা কাজে ফিরে আসব।

রাজধানীর ধানমন্ডি, হাজারীবাগ ও মোহাম্মদপুর এলাকার সড়কেও শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। বিশেষ করে, সড়কগুলোতে নানা রকম অসঙ্গতি দেখা যায়। এজন্য বুধবার সকাল থেকেই এসব এলাকার সড়কগুলোতে যানজট কমিয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা ট্রাফিক পুলিশের ভ‚মিকায় কাজ করছেন। 

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিকের ভ‚মিকায় কাজ করা শিক্ষার্থী রুবেল হাসান বলেন, আমরা সকাল থেকে শিফটভিত্তিক বিভিন্ন সড়কে যানজট নিরসনসহ সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলাচল করতে ট্রাফিক পুলিশের ভ‚মিকায় কাজ করে যাচ্ছি। এতদিন ধরে কোটা আন্দোলনে আমাদের ভাই-বোনেরা অনেকে শহিদ হয়েছে। শুধুমাত্র একটি সুশৃঙ্খল দেশ সবাইকে উপহার দেওয়ার জন্য আমরা সর্বাÍক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই আমাদের সঙ্গে দেশের সব জনগণ একত্র হয়ে একটি সুশৃঙ্খল দেশ গড়ে তুলবে। 
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হেলাল আহমেদ বলেন, আমরা একটি সুশৃঙ্খল দেশের জন্য জীবন দিয়েছিলাম। আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে দেশ গড়ে তুলব। 

একইভাবে উত্তরায় পরিচ্ছন্নতা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নামে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবারের মতো বুধবারও দিনভর সড়কে তাদের ব্যস্ততা দেখা গেছে। উত্তরার আজমপুর পূর্ব থানার সামনে, জমজম টাওয়ার, বিএনএস সেন্টার, আব্দুল­াহপুর, বিমানবন্দর গোলচত্বর ও ১২নং সেক্টরখালপাড় মোড় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন তারা। 

এ সময় তারা সাধারণ মানুষকে যত্রতত্র ময়লা না ফেলতে অনুরোধ করেন এবং বিভিন্ন স্থাপনার দেওয়াল লিখনও মুছে দেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের দলবদ্ধভাবে সড়কের আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। যেসব সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই, সেখানে শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলে দায়িত্ব পালন করছেন এবং চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম