উত্তাল দেশ, আ. লীগ কার্যালয় ও পুলিশ বক্সে আগুন, ম্যুরাল ভাঙচুর
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম
চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গণহত্যা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশ।
শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে তিনটি পুলিশ বক্সসহ সরকারি স্থাপনা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিনটি ওয়ার্ড কার্যালয় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, চট্টগ্রামে সংসদ সদস্যের অফিসে আগুন ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর, বগুড়ায় পুলিশ বক্সে আগুন ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, বরিশালে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর, নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর-আগুন, থানা লক্ষ্য করে গুলি, শ্রীপুরের মাওনায় পুলিশ বক্স-ভ্যানে আগুন দিয়েছেন। যুগান্তর প্রতিবেদন, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
রাজশাহী: সকাল থেকেই রাজশাহীর সড়কে নেমে আসেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টির কারণে তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা সরে যান। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মধ্যেই কর্মসূচি চালিয়ে যান। আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারি হয়ে নর্দানের মোড়ে যান। সেখান থেকে ঘুরে একই স্থানে এসে আবারও কর্মসূচিতে অংশ নেন। এক পর্যায়ে তারা তালাইমারি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালান। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ছাত্রলীগের কার্যালয়ে তারা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেন। পরে তারা তালাইমারি মোড়, ভদ্রা হয়ে রেলগেট শহিদ এএইচএম কামরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত যান।
ভদ্রা পার হওয়ার সময় তারা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এরপর রেলগেট এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এরপর রেলগেটে তারা একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেন। পুলিশের ব্যবহৃত আসবাবপত্রেও তারা আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর থেকে আবার ভদ্রায় ফিরে যাওয়ার সময় শিরোইল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পশ্চিম রেলওয়ের গার্ডদের কক্ষ ভাঙচুর করেন। এ সময় শিরোইল বাসস্ট্যান্ড এবং ভদ্রার মাঝামাঝি থাকা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান এবং অগ্নিসংযোগ করেন।
চট্টগ্রাম: নিউমার্কেট মোড় থেকে বিক্ষোভ শেষ করে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে টাইগারপাসের দিকে অগ্রসর হন। টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছলে মিছিল থেকে বের হয়ে আন্দোলনকারীরা সেখানকার পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায়। তখন সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। পরে তারা মিছিল নিয়ে লালখান বাজার ও ওয়াসার দিকে এগিয়ে যায়। মিছিলটি ওয়াসা মোড় পৌঁছলে পেট্রোল পাম্পের পাশে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বগুড়া: আন্দোলনকারীরা শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় দখলে রেখে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারা বিভিন্ন মার্কেটের ছাদে লাগানোর আওয়ামী লীগ নেতাদের শুভেচ্ছা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। সাতমাথায় পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ, অগ্রণী ব্যাংকের সাইনবোর্ড ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, মুজিব মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল রং দিয়ে বিকৃত করে দেওয়া হয়। তারা রোড ডিভাইডার ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলো উপড়ে ফেলে। পুরো শহরের রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তারা সাতমাথায় পুলিশ বক্সেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
বরিশাল: ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে মহাসড়কের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার এ ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সংগঠক। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেলা ১১টার দিকে বিএম কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নথুলাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে। সেখানে দেড়টা পর্যন্ত অবস্থান করে মহাসড়কের হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন মহাসড়কে যায় শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা এপিবিএনের গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে।
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী): টাউন হল মোড়ে দিয়ে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় প্রথম দফায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জিলা স্কুল পর্যন্ত চলে যায়। পরবর্তীতে জিলা স্কুল এলাকা থেকে পেছনে এসে জেলা আ.লীগ কার্যালয়ের মূল ফটকের কলাপসিপল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে নিচ তলার ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে অগ্নিসংযোগ করে। আন্দোলনকারীরা সরে গেলে স্থানীয়রা পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারীরা মাইজদী নতুন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসও ভাঙচুর করে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, আন্দোলনকারীরা সুধারাম মডেল থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থানা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
এ সময় তাদের মধ্য থেকে থানা লক্ষ্য করে গুলিও করা হয়। গুলি থানার ভবনের তৃতীয় তলার একটি জানালার কাচে গিয়ে লাগে। তবে কেউ আহত হয়নি। এদিকে মাইজদী বাজার থেকে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল টাউন হল চত্বরে পৌঁছলে মিছিলকারীদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা তখন জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করে। মিছিলকারীরা গেট ভেঙে অফিসে ঢুকে প্রথমে নিচতলা ও পরে দোতলায় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিলে সুসজ্জিত অফিসটি পুড়ে যায়।
গাজীপুর: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পলী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা দুপুরে মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর দিকে যায় এবং তারা শ্রীপুর গামী সড়কের ভাই ভাই সিটির নিচে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িতে হামলা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের ওই তিনটি গাড়ি এবং উড়াল সেতুর নিচে হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া তারা লাঠিসোটা নিয়ে সড়কের সাঁটানো বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এবং রাস্তার পাশে থাকা শাহজালাল ব্যাংকে হামলা চালায়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।