Logo
Logo
×

জাতীয়

কোটা আন্দোলন: যে কারণে বহু মৃত্যুর কারণ চাপা পড়ার শঙ্কা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম

কোটা আন্দোলন: যে কারণে বহু মৃত্যুর কারণ চাপা পড়ার শঙ্কা

কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় শিশুরাও হতাহত হয়েছে। ছবি: বিবিসি বাংলা

সংঘাত-সহিংসতাসহ যে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত করা বিধান রয়েছে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সম্প্রতি সারা দেশে যে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের একটি বড় অংশকেই সমাধিস্থ করা হয়েছে ময়নাতদন্ত না করেই। 

ঠিক কতগুলো মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের অন্তত ৫৮টি মরদেহের খোঁজ পাওয়া গেছে।

এক্ষেত্রে ঘটনাস্থলেই যাদের মৃত্যু হয়েছে, ‘পুলিশি ঝামেলা’র ভয়ে তাদের স্বজনদের অনেকেই মরদেহ সরাসরি বাড়িতে নিয়ে দাফন করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

অন্যদিকে যাদের মৃত্যু হাসপাতালে হয়েছে, তাদের বিষয়ে খবর দেওয়া হলেও পুলিশ অনেকক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও পুলিশ সেটি অস্বীকার করেছে।

তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নিজেদের রক্ষা করতেই পুলিশ ময়নাতদন্ত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

‘এসব মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে পুলিশের নামও জড়িত রয়েছে। ফলে তারা নিজেদের গাঁ বাঁচানোর চেষ্টা থেকেই এসব করছে,’ বলেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল।

এ পরিস্থিতিতে যথাসময়ে ময়নাতদন্ত না হওয়ার ফলে নিহতদের অনেকের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ চাপা পড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

খবর পেয়েও যায়নি পুলিশ

‘বুলেট ইনজুরিতে মৃত্যু হওয়ায় আমরা দ্রুত পুলিশকে ইনফর্ম করি, কিন্তু পুরো একটা দিন পার হওয়ার পরও তাদের কেউ আসেননি,’ অভিযোগের সুরে বলছিলেন ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।

গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকাটি রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই একদল লোক প্রায় ২০ বছর বয়সি এক তরুণের গুলিবিদ্ধ মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে যায় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।

‘আহতদের চিকিৎসা দিতেই আমাদের তখন হিমশিম অবস্থা। ফলে কে বা কারা লাশটি নিয়ে এসেছিল, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই,’ বলছিলেন তিনি।

পরে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে রাতেই উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

‘তখন তারা বলেছিল, একটু অপেক্ষা করে দেখেন কেউ খোঁজ করতে আসে কি-না,’ বলেন হাসপাতালের কর্মকর্তা।

কিন্তু সারা রাত অপেক্ষার পরেও কেউ ওই মরদেহের সন্ধান না করায় পরদিন সকালে দ্বিতীয় দফায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা।

‘পুলিশ এরপর জানাল যে, তারা আসতে পারবো না। লাশ কী করবো?- জানতে চাইলে বলল, সেই সিদ্ধান্ত আপনারা নেন,’ বলছিলেন কর্মকর্তা।

মামলার হুমকি

পুলিশ না আসায় মরদেহটি দাফনের জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম’কে খবর দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানেও বাঁধে বিপত্তি।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, পুলিশি কাগজপত্র ছাড়া তারা মরদেহ দাফন করতে পারবেন না। ফলে সেদিনই আবারও থানায় যোগাযোগ করেন কর্মকর্তারা।

‘তখন তারা রীতিমত হুমকি দিয়ে বসলো! বললো, এরপর যোগাযোগ করলে নাকি আমাদের বিরুদ্ধেই কেস ফাইল করবে!,’ বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন হাসপাতালটির ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা।

এ ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি তারা।

‘কিন্তু গরমের মধ্যে তো আর এভাবে ফেলে রাখা যায় না। সেজন্য আমরাই ছেলেটার পরিচয় খুঁজতে লেগে পড়লাম,’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন।

কিন্তু শেষমেশ পরিচয় পাওয়া গেল কীভাবে?

‘ছেলেটার চেহারা এবং পোশাক দেখে আমাদের মনে হয়েছিল যে, সে মাদ্রাসার ছাত্র হতে পারে। ফলে আশপাশের সব মাদ্রায় আমরা খবর পাঠালাম এবং তাতেই কাজ হলো,’ বলেন ওই কর্মকর্তা।

দুই দিন হাসপাতালে পড়ে থাকার পর ২০ জুলাই রাতে নিহত তরুণের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তাদের ও নিহত তরুণের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হলো না।

‘নামধাম প্রকাশ করলে পুলিশ ঝামেলা করতে পারে। আমরা সেটা চাই না,’ বলছিলেন হাসপাতালের কর্মকর্তা।

ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সংখ্যা কত?

উত্তরার হাসপাতালটি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সহিংসতায় নিহতদের ময়নাতদন্তের ব্যাপারে তারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।

‘কিন্তু তারা বলেছে, মৃতদের পরিবার চাইলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিতে যেতে পারে। এরপর আমরা স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর শুরু করি,’ বলেন ঢাকার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা।

কোটা আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে ঠিক কতগুলো মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই এভাবে হস্তান্তর ও সমাধিস্থ করা হয়েছে, সেটির সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই।

তবে এ ধরনের কমপক্ষে ৫৮টি মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই ময়নাতদন্ত না হওয়ার সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ অন্তত দশজনের মৃত্যু হয়েছে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা-বনশ্রী এবং মোহাম্মদপুর এলাকার বেসরকারি পাঁচটি হাসপাতালে কমপক্ষে ৩৩ জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের কারোরই ময়নাতদন্ত হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যেও কোনো কোনোটিতে নিহতদের সবার ময়নাতদন্ত হয়নি বলে জানা যাচ্ছে।

ঢাকার মধ্যে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্ত ছাড়াই অন্তত ১৩টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দু'জনের ময়নাতদন্ত হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

‘এর সময়গুলোই মৃত অবস্থায় এসেছিল। কিন্তু তখন আহত রোগীর চাপ এত বেশি ছিল যে, ময়নাতদন্তের মতো সময়সাপেক্ষ ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়ার অবকাশ ছিল না,’ বলেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ‘নিহতদের ময়নাতদন্ত করতে গেলে তখন আহত অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।’

অন্যদিকে সহিংসতায় নিহত অন্তত ৯৬ জন ব্যক্তির মরদেহ এসেছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এর মধ্যে ৯৪ জনেরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বাকি দু’টি মরদেহ এসেছিল ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা থেকে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত শেষ না করেই পুলিশ মরদেহগুলো নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মর্গের কর্মকর্তারা।

ঠিক কী কারণে ময়নাতদন্ত না করেই মরদেহ ফিরিয়ে আনা হলো, সে বিষয়ে জানতে মোহাম্মদপুর থানায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু যার সময় ঘটনাটি ঘটেছে, সম্প্রতি সেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদলি হয়ে চলে যাওয়ায় নতুন কর্মকর্তা ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।

এসব ঘটনার বাইরে, নিহতদের স্বজনদের মধ্যেও ময়নাতদন্তের বিষয়ে এক ধরনের ভীতি কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।

‘এগুলো করলে কী আমার ছেলে আবার ফিরে আসবে? আসবে না,’ বলছিলেন গত ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুরে নিহত হাসিব ইকবালের বাবা আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি আরও বলেন, ‘একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এমনিতেই আমাদের দিশেহারা অবস্থা। এরমধ্যে নতুন করে পুলিশি ঝামেলায় জড়াতে চাই না।’

আইনে কী আছে?

বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, অস্বাভাবিক যেকোনও মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত করা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।

‘অস্বাভাবিক যেকোনও মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত করতেই হবে। এর কোনও ব্যত্যয় আইনে নেই,’ বলেন শহীদুল হক।

অস্বাভাবিক বা অপঘাতে মারা যাওয়ার ঘটনায় ময়নাতদন্ত, তথা ব্যক্তির মৃতদেহ বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করা হয়।

বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ নম্বর ধারায় এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোনও ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বলে সন্দেহের অবকাশ থাকলেই ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর আসল কারণ খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।

এক্ষেত্রে মৃতদেহ কী অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে পুলিশ প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে, সেটি সুরতহাল প্রতিবেদন নামে পরিচিত।

এরপর মৃত্যু সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য ময়নাতদন্ত করতে পাঠানো হয়।

মর্গে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন দেখে, প্রথমে মৃতদেহের বাহ্যিক অবস্থার বিশ্লেষণ করেন। মৃতের শরীরে কোন আঘাতে বা ক্ষতের চিহ্ন আছে কিনা, এরকম নানান বিষয় পরীক্ষা করে দেখেন চিকিৎসকরা।

একই সঙ্গে মৃতের দেহ ব্যবচ্ছেদ করে মস্তিষ্ক, ফুসফুস, লিভারসহ শরীরের ভেতরটা ঠিকমত যাচাই করে দেখা হয়। ফলে শরীরের ভেতরে কোন আঘাত থাকলে, রক্তক্ষরণ বা বিষক্রিয়া থাকলে, সেটি চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন।

শরীরে গুলির চিহ্ন থাকলে কোন সময়ে গুলি করা হয়েছিল, কী ধরনের গুলি করা হয়েছে, কতদূর থেকে গুলি করা হয়েছে ইত্যাদি বিষয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উঠে আসে।

‘ময়নাতদন্ত না হলে একটি খুনের ঘটনারও স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে দেখানোর সুযোগ থেকে যায়,’ বলেন সাবেক আইজিপি।

‘কাজেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থেই ময়নাতদন্ত করাটা খুব জরুরি,’ বলেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ যা বলছে

গুলিতে নিহত তরুণের বিষয়ে জানানোর পরও হাসপাতালে না এসে উল্টো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার হুমকির বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে না পাওয়া গেলেও কথা হয়েছে দুই কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা দু’জনই অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

তবে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা শুরু হওয়ায় গত প্রায় দুই সপ্তাহে অনেক বিষয়ে তারা নজর দিতে পারেননি বলে স্বীকার করেছেন।

‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই তখন আমাদের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল,’ বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

অন্যদিকে ময়নাতদন্তে গাফিলতির বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন।

‘এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমরা এখনও পায়নি। কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে,’ বলেন তিনি।

সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে যাদের তথ্য পুলিশ পেয়েছে, তাদের সবার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

স্বজনরা কেন চাচ্ছেন না?

কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্বজনরাও অনেকে ময়নাতদন্ত চাচ্ছেন না। ঘটনাস্থল, এমনকি হাসপাতাল থেকেও মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন তারা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ বলছেন যে, পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতির পাশাপাশি নিহতদের স্বজনদের অনাগ্রহের কারণেও তারা ময়নাতদন্ত না করেই মরদেহ ছেড়ে দিয়েছেন।

অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিচার পাওয়ার জন্য মৃতের ময়নাতদন্ত করা জরুরি। কিন্তু কোটা আন্দোলনে গুলি, হামলাসহ নানা কারণে মারা গেলে জেনেও স্বজনরা কেন ময়নাতদন্তে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না?

‘এগুলো করলে কী আমার ছেলে আবার ফিরে আসবে? আসবে না,’ বলছিলেন ঢাকার মিরপুরে নিহত হাসিব ইকবালের বাবা আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি আরও বলেন, ‘একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এমনিতেই আমাদের দিশেহারা অবস্থা। এরমধ্যে নতুন করে পুলিশি ঝামেলায় জড়াতে চাই না।’

একই ধরনের বক্তব্য ফুটে উঠেছে ঢাকায় নিহত শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তীর কণ্ঠেও।

তিনি বলেন, ‘কার কাছে বিচার চাইবো?... আমার ভাইকে তো পুলিশ গুলি করছে। এখন আমি থানায় যেয়ে পুলিশের কাছে বিচার চাইবো?’

তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই স্বজনরা ময়নাতদন্তে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।

‘এসব ঘটনাই বলে দিচ্ছে যে, বিচার বিভাগের উপর মানুষের আস্থা নেই। তারা ময়নাতদন্ত বা মামলার দিকে যাচ্ছেন না, কারণ তারা মনে করছেন এটি করে বিচার পাওয়া যাবে না,’ বলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল।

এখনও কি ময়নাতদন্তের সুযোগ আছে?

কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত অনেকের মরদেহ সমাধিস্থ করা হলেও সেগুলো ময়নাতদন্তের সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘এটি এখনও করা যাবে। তবে তার জন্য আগে মামলা করতে হবে,’ বলেন সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক।

তবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দাফনের আগেই সাধারণত পুলিশ মামলা নিয়ে থাকে।

‘কারণ পুলিশ নিজেই তখন মৃত ব্যক্তিকে দেখে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, দাফনের পর ময়নাতদন্ত করতে হলে আদালতের পারমিশন লাগে,’ বলেন তিনি।

কাজেই সমাধিস্থ হওয়ার পর মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্তের মাধ্যমে বিচার পেতে চাইলে সরাসরি আদালতে যেতে হবে।

‘সেখানে প্রাথমিক শুনানিতে বিচারক যদি প্রাথমিকভাবে কনভিনসড হন যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে বা স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হচ্ছে না, তখন তিনি ডেডবডি তুলে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিবেন,’ বলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক।

তবে সমাধিস্থ করার পর যত দেরি হবে, ন্যায়বিচার পাওয়া ততই কঠিন হয়ে যাবে মনে করেন এই আইনজীবী।

‘মৃত্যুর পর তাড়াতাড়ি পোস্টমর্টেম করা গেলে রিপোর্টটা কনভিনসিং হয়। দেরি হলে (মরদেহ নষ্ট হয়ে) অনেক এভিডেনস পাওয়া যায় না। ফলে এভিডেনস হিসেবে রিপোর্টটা তখন হালকা হয়ে যায়,’ বলেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম