স্কুলশিক্ষার্থী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আ.লীগের বিপক্ষে, কেন এমনটা ঘটল: সুজন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫৫ পিএম
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ২০০৯ সালে তরুণ সমাজের সমর্থনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছিল। এখন হাইস্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, সবাই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। কেন এমন ঘটল, কী ঘটল।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
কোটা আন্দোলনকে রোগের উপসর্গ উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রোগটা আরও গুরুতর। জটিল ও ভয়াবহ রোগটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কাছের না হলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ভোটাধিকার, আইনের শাসনের মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এ অধিকারগুলো সমন্বিত। একটা বঞ্চিত হলে আরেকটা থেকেও বঞ্চিত হতে হয়।
এসব অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে রোগের উপসর্গের চিকিৎসা হবে না, রোগ সারবে না উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা এখন অধিকার আদায়ের আন্দোলন।’
শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, এসব অন্যায়ের বিচার যেন হয়। রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট ঘটনাকে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, জনগণ ভোটাধিকার ও আইনের শাসনের মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এটা এখন অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংকট নিরসনে আন্তরিক বা কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরকার একটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে ক্ষত জাতির হৃদয়ে হয়েছে সেটা গভীর। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যে ঘটনা, তা পুরো সমাজকেই প্রভাবিত করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে জনগণকে স্বস্তির জায়গায় আনা যাবে না।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট ঘটনাকে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ জানিয়ে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, টগবগে তরুণদের প্রাণ গেছে। এবারের আন্দোলনও ব্যর্থ হবে না।
তিনি আরও বলেন, অনেকে দ্বিধায় ভোগেন আওয়ামী লীগ চলে গেলে কি বিএনপি-জামায়াত আসবে? আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে, বিএনপিকেও দেখেছি। জামায়াত-জাতীয় পার্টিকেও দেখেছি। সব রাজনৈতিক দল গণধিকৃত হয়, তাহলে সবাইকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নতুন সংবিধান লিখতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পুলিশের বক্তব্যকে ভয়ানক উল্লেখ করে নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন বলেন, পুলিশ বলছে তারা কাউকে মারেনি, সন্ত্রাসীরা মেরেছে। আমরা তো ছবি, ভিডিও দেখেছি। এসব পুলিশি তদন্ত করে লাভ হবে না। সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, বর্তমান পরিস্থিতি, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ ও অচলাবস্থা নিরসনে করণীয় তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, চলমান আন্দোলন কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই অচলাবস্থা নিরসনে বিক্ষিপ্ত দাবি পূরণের আশ্বাস যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়- ছাত্রসহ নাগরিকদের যৌক্তিক দাবি পূরণের মধ্য দিয়ে চলমান আন্দোলন ও অচলাবস্থার নিরসন ঘটাতে হবে। সরকার বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এ আন্দোলনকে দমন করতে চাইলে ভবিষ্যতে আরও বড় অসন্তোষ মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে; যার পরিণতি হতে পারে আরও ভয়াবহ।