Logo
Logo
×

জাতীয়

কোটা আন্দোলন: যে কারণে জানা যাচ্ছে না মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম

কোটা আন্দোলন: যে কারণে জানা যাচ্ছে না মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা

কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের অ্যাকশন, সাম্প্রতিক ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের সংখ্যার বিষয়ে প্রকাশিত সরকারি তথ্যের সঙ্গে বেসরকারি তথ্যের বড় ব্যবধান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে আন্দোলনকে ঘিরে গত দুই সপ্তাহের সহিংসতায় ঠিক কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, সেটি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে গত ১৬ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২৬৬ জন মানুষ মারা গেছেন বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

এর মধ্যে আবার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরেও মৃত্যু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রকাশ হতে দেখা যাচ্ছে। কোথাও বলা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ২১১ জন, আবার কোনো গণমাধ্যম দাবি করছে ১৮৫ জন।

কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত? এ বিষয়ে হাসপাতালগুলোই বা কী বলছে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত দুই সপ্তাহের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ।

ঢাকাসহ যেসব জেলায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব এলাকার দুই ডজনেরও বেশি হাসপাতাল এবং নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোতেই মারা গেছেন অন্তত ১৬৫ জন।

বাকিদের মৃত্যু হয়েছে সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, মাদারীপুর এবং বগুড়ায়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। সোমবার পর্যন্ত সেখানে মারা যাওয়া মোট মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৮৬ জনে।

‘এদের মধ্যে ৬০ জনকেই হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে,’ বলেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

ঢাকার অন্য সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে আটজন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাতজন এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে ছয়জন মারা গেছেন।

এর বাইরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারজন করে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া সহিংসতায় ঢাকায় পুলিশের তিনজন সদস্যের মৃ্ত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় আহত হয়ে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে অন্তত ৩৪ জনের মৃ্ত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির খবর মিলেছে উত্তরা ও রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে।

কারণ গত ১৮ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত এসব এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

ঢাকা মহানগরীর বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে।

বেসরকারি এই হাসপাতালটিতে অন্তত ১০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, মাদারীপুর এবং বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আরও কমপক্ষে ৩৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

মৃতদের সবার তথ্য নেই

কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্দোলনকারী, এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও এই কথা বলা হয়েছে।

এর একটি কারণ হলো আহতদের অনেকেই এখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে মৃতদের সবার তথ্য হাসপাতালগুলোর কাছে নেই।

কর্মকর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন যে, আহতদের চাপ সামলাতে গিয়ে নিহতদের সবার তথ্য তারা রাখতে পারেননি।

‘যারা আহত অবস্থায় এসেছেন, তাদেরকে বাঁচানোই তখন আমাদের মূল ফোকাস ছিল। ফলে সবার তথ্য রাখা সম্ভব হয়নি,’ বলেন ফরাজী হাসপাতালের উপ-মহাব্যবস্থাপক রুবেল হোসাইন।

বনশ্রী, আফতাবনগর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরার আরও অন্তত সাতটি হাসপাতাল থেকে একই ধরনের তথ্য পেয়েছে বিবিসি বাংলা।

নাম নিবন্ধন করার আগেই স্বজনদের অনেকে মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন বলেও জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

পুলিশ ও স্বজনরা আগ্রহ না দেখানোই মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তারা।

১৮ জুলাই থেকে পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কমপক্ষে ১১ জনের মরদেহ আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

‘এর মধ্যে একজনের ব্যাপারে কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। এন্ট্রি করার আগেই পরিবারের সদস্যরা লাশ নিয়ে চলে গেছে,’ বলেন হাসপাতালটির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।

একই এলাকার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে অন্তত সাত জনের মরদেহ এসেছিল বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তবে নিবন্ধন খাতায় তথ্য আছে মাত্র পাঁচজনের।

এদিকে ১৮ জুলাইয়ের পর আফতাবনগর এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড হাসপাতালে অন্তত দুইজন ব্যক্তির মরদেহ আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে একজনের নাম-ঠিকানা লেখা থাকলেও অন্যজনের ব্যাপারে কোনও তথ্যই হাসপাতালটির কাছে নেই।

একই সময়ে বাড্ডা ও রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বেটার লাইফ হাসপাতাল, ডেলটা হেলথ কেয়ার, আল-রাজী ইসলামিয়া হাসপাতাল, অ্যাডভানস হাসপাতাল, বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে শতাধিক আহত ব্যক্তি এবং বেশ কিছু মরদেহ আনা হয়েছিল।

এক্ষেত্রে আহতদের ব্যাপারে কিছু তথ্য নথিভুক্ত করা হলেও মরদেহের তথ্য রাখা হয়নি বলে হাসপাতালগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

‘কারণ আমাদের এখানে কেউ মারা যায়নি। মৃত অবস্থাতেই আনা হয়েছিল,’ বলেন বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা।

একইভাবে যাত্রাবাড়ী এলাকার সালমান হাসপাতাল, প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতাল এবং ইসলামিয়া হাসপাতালে মৃতদের ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই।

মৃত অবস্থায় যেসব মরদেহ এসেছিল, সেগুলোকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে হাসপাতালগুলো।

উল্লিখিত হাসপাতালগুলোর বাইরেও ঢাকায় আরও অনেক হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলোতে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে সেগুলোর সবকটিতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পুলিশ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য বা পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি।

এমনকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব মরদেহ আনা হয়েছিল, তার অনেকগুলো অজ্ঞাতনামা হিসেবে পরবর্তীতে দাফন করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম