সিলেটে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি চলছে। বুধবার দুপুর এ কর্মসূচি পালনের সময় সিলেটে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা পদযাত্রা নিয়ে নগরের সুবিদ বাজারের দিকে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু করে।
পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এখন নগরের বিভিন্ন অলিগলিতে গিয়ে তারা জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিচ্ছেন।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারী শুরু করেন।
পরে সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর আরও শিক্ষার্থী যোগ দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তখন পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী পদযাত্রা নিয়ে সেখান থেকে শহরের কোর্ট পয়েন্টের দিকে যায়। সেখান থেকে পদযাত্রা নিয়ে তারা সুবিদ বাজারে গেলে এ সংঘর্ষ বাধে।
প্রসঙ্গত আজকের কর্মসূচির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ গতকাল রাতে জানান, বুধবার দুপুর ১২টায় দেশের সব আদালত চত্বর, ক্যাম্পাসে ও রাজপথে এ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে।
৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘোষিত ৯ দফা হলো:
১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শহিদ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ড্রাগ অ্যাডিক্ট বলে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩। ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র-নাগরিক শহিদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরদের পদত্যাগ করতে হবে।
৫। যে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যেসব সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে এবং যেসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিকদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তাদের আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
৬। দেশব্যাপী যেসব ছাত্র-নাগরিক শহিদ এবং আহত হয়েছে তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে।
৮। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিয়ে সারাদেশের সমস্ত ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াট এবং আর্মি তুলে নিতে হবে।
৯। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। ইতোমধ্যে গণগ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির শিকার সমন্বয়ক ও ছাত্র-নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।