প্রতীকী ছবি
ভুয়া নথিপত্র বা জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি যারা তৈরি করে সেই চক্রের প্রথম ও প্রধান টার্গেট থাকে জমি দখল বা জাল দলিল তৈরি। এক্ষেত্রে জালিয়াতি চক্রের প্রথম টার্গেট হয় দামি ও পতিত জমি। যখন কোনও জমির দীর্ঘদিন ধরে খাজনা দেওয়া হয় না, কিংবা জমিতে কেউ থাকে না তখন সেই জমির মূল মালিকের একটি ভুয়া এনআইডি তৈরি করা হয়। তারপরই সেই জমি বিক্রি ও দখলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ঢাকার ডেমরার সহকারী ভূমি কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ধরেন আমার এক টুকরা জমি আছে, ৫-১০ বছর ঐ জমির কোনও খোঁজখবর রাখছি না বা খাজনাও দিচ্ছি না। তখন এরকম জমি খোঁজে ওই চক্রগুলো। এরপরই ভুয়া এনআইডির মাধ্যমে ওটার একটা দলিল তৈরি করে। কাউকে আবার পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দিয়েও জমি বিক্রি করা হয়। এভাবেই জালিয়াত চক্রগুলো জমি দখল ও বেচাকেনা করে।
সাধারণ জমি নামজারি বা দলিল তৈরি হয়ে থাকে সারা দেশের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর মাধ্যমে। সেখান থেকেই বেশির ভাগ জালিয়াতির ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।
আইনজীবীরা বলছেন, অনেক সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি ধরে দলিলদাতা বা গ্রহীতার সাজা হয়। এক্ষেত্রে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করেও জালিয়াতি নির্ণয় করা যায়।
খেয়াল রাখতে হবে, অনেক আগের দলিলে আগের চিহ্নিত কিছু সিল ব্যবহারই থাকে। আগের দলিল কিন্তু সিল যদি নতুন হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, দলিলটি জাল হতে পারে।
একই সঙ্গে তারিখটিও ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। এছাড়া অনেক সময় অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।
জাল দলিলে জমি দখল হলে কী করবেন?
একটি জমি একাধিক মালিকের নামে করা থাকলে ধরে নিতে হবে দলিলটি জাল হতে পারে।এক্ষেত্রে ভূমি খাতের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল মালিক কে, তা নির্ণয় করতে হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না, সেটা সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।যদি দেখা যায়, সিএস জরিপের সঙ্গে বিক্রেতার খতিয়ানের কোনও গরমিল আছে, তাহলে বুঝতে হবে কোনও জটিলতা আছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, জরিপ খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে যতবার বিক্রি হয়েছে, তার সঙ্গে জমির পরিমাণ মিল আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা। দাগ নম্বর, ঠিকানা এসব ঠিক আছে কি না, এসব যাচাই করতে হবে।
সম্প্রতি কোনও আমমোক্তারনামা দলিল থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না যাচাই করতে হবে।
কোনও দান করা জমি হলে দলিলে সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে গ্রহীতা দখলে গেছে তা যাচাই করতে হবে। দলিলটি রেজিস্ট্রি করা কি না এবং দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক কী, তা যাচাই করতে হবে।
জমিজমা কেনাবেচার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে বলছে পুলিশ। তাই জনগণের উচিত হবে যে কোনও জিনিস ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য জায়গা বাছাই করা। কাগজপত্র নকল কিনা সেটা যাচাই করা। অরিজিনাল কাগজ না হলে এসব বিষয়ে এড়িয়ে চলতে হবে।