কোন দোষে মারল ফয়েজকে, কে এই জবাব দেবে, প্রশ্ন স্ত্রীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের ঝাউডুগী গ্রামের বাসিন্দা মো. ফয়েজ। সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় আসেন একযুগ আগে। সেই থেকেই স্যানিটারি মিস্ত্রির (পাইপ ফিটার) কাজ করতেন তিনি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের খবর পেয়ে ছেলে মো. ফয়েজকে ফোন দেন মা সবুরা বেগম।
এ সময় ছেলে বলেন, ‘অনবরত গুলি হচ্ছে। আমি কাজ শেষ করে বের হয়েছি। মা, এখন ফোন রাখো।’ এই কথাগুলোর এক পর্যায়ে হঠাৎ গুলির বিকট শব্দ পান মা। এর পর সব স্তব্ধ। ছেলের আর কোনো কথা শুনতে পাননি তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ২১ জুলাই সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মো. ফয়েজ। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল ইউপির ঝাউডগী গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
গুলিবিদ্ধ ফয়েজকে হাসপাতালে নিয়েছিলেন তার পরিচিত স্যানিটারি ঠিকাদার মো. কাশেম।
তিনি বলেন, চাঁদা তুলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তিনি আহত মো. ফয়েজকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি মাথায় ও ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার লাশ রায়পুরের ঝাউডুগী গ্রামে নেওয়া হয়।
‘মা অনবরত গুলি হচ্ছে পরে কথা বলব’
ঠিকাদার কাশেম আরও বলেন, ফয়েজ তার সঙ্গে দুই বছর ধরে কাজ করছেন। দিনে ৭০০ টাকা মজুরি পেতেন। সামান্য এই আয় দিয়ে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২১ জুলাই বিকালে সাইনবোর্ড এলাকার একটি ভবনের কাজ শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
ফয়েজের মৃত্যুর পর স্ত্রী নুর নাহার ও তার ১৮ মাস বয়সি ছেলে রাফি মাহমুদের ঠাঁই মিলেছে গাজীপুর জেলার টঙ্গীর এক স্বজনের বাসায়। মোবাইল ফোনে নুর নাহার বলেন, ‘স্বামী আমার আশ্রয়, সম্বল সবকিছু ছিল। তাকে গুলি করে মারল। কোন দোষে মারল তাকে, কে এই জবাব দেবে?’
ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও কান্না থামেনি ফয়েজের মা সবুরা বেগমের। কেঁদে কেঁদে তিনিও বলেন, ‘গুলি করে আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলেছে। ছেলে তো আর ফিরে আসবে না। ওর অসহায় বউ আর ছেলেকে কে দেখবে?’
রোববার সকালে ফয়েজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশেই তার কবরস্থান। সেখানে দেখতে আসছেন স্বজনরা। কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন আর দোয়া করে চলে যাচ্ছেন। ফয়েজের বাবা আলাউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, দুটি গুলি আমার ছেলেটারে শেষ করে দিল! ছেলে হত্যার বিচার চাই। কিন্তু কার কাছে বিচার চাইব? আমি চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি করতাম। সেনা সরকারের সময় এক আন্দোলনে আমি চাকরি হারিয়েছি। এবার আরেক আন্দোলনে ছেলেকে হারালাম। আল্লাহর কাছে বিচার চাই।