Logo
Logo
×

জাতীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি: ‘বাবা হত্যার বিচার কার কাছে চাইব’

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩ এএম

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি: ‘বাবা হত্যার বিচার কার কাছে চাইব’

নিহত ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম। ছবি সংগৃহীত

‘বাবা হত্যার বিচার কার কাছে চাইব? তিনি তো আন্দোলনে যাননি। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো? বাবা সেদিন আশুরার রোজা রেখেছিলেন। আসরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় আমার নিরপরাধ বাবার বুকে গুলি চালানো হলো কেন?’ কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামের ছেলে সিয়াম।


কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার গামারুয়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম (৫৫)। তিনি ঢাকার উত্তরায় পরিবার নিয়ে বসবাস এবং সেখানে রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা করতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৮ জুলাই আশুরা উপলক্ষ্যে রোজা রেখেছিলেন তাজুল ইসলাম। বিকালে উত্তরার বাসার পাশের একটি মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। মুসলি­সহ আশপাশের মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। 

এ সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি বুলেট তাজুল ইসলামের বুকে এসে বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে উত্তরায় বাস করতেন। আজমপুর এলাকায় তার রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা ছিল।

নিহতের ছেলে সিয়াম বলেন, ঘটনার দিন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাবাকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করেছিলাম। তিনি তা শোনেননি। সংঘর্ষের খবর পেয়ে বাবাকে ফোন করি। তিনি জানান, একটি মসজিদের ভেতর আছেন। বিকালে ইফতার নিয়ে বাসায় আসবেন। সংঘর্ষের সময় মসজিদ থেকে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হন। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে বাবার গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পাই। তখন হাসপাতালে রক্তাক্ত অনেক মানুষের চিৎকার আর আহাজারিতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। এ বয়সে এত রক্ত কখনো দেখিনি।

সিয়াম বলেন, আমার বাবার তো কোনো অপরাধ ছিল না। তিনি কোটা আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে ছিলেন না। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো। এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসার? সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। কার কাছে বিচার চাইব? বাবার মৃত্যুর শোকে মাও এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

নিহতের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, অন্যদের কাছ থেকে জেনেছেন, তার ভাই বাসায় ফিরতে চেয়েছিলেন। তাই রাস্তার পরিস্থিতি দেখতে মসজিদ থেকে বের হন। এ সময় হঠাৎ গুলি এসে বুকে লাগে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই মারা যাওয়ার কারণে চিকিৎসকরা মরদেহের ভেতর থেকে আর গুলি বের করেননি। এ অবস্থায়ই গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। ভাইয়ের মৃত্যুতে তার সংসারটি অসহায় হয়ে গেল। সরকারি কোনো সহায়তা না পেলে পরিবারটিকে রাস্তায় বসতে হবে। তিনটি সন্তান নিয়ে ভাবির চলার মতো কোনো অবলম্বন নেই। এ পরিবারটির দিকে সদয় দৃষ্টি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম