ফোরজি মোবাইল ইন্টারনেট সচল হলেও গতি নেই
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ৩১ জুলাই

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৪ পিএম

মোবাইল ফোন ইন্টারনেট (ফোরজি) চালু হলেও গতি পাওয়া যাচ্ছে না। ধীরগতিতে চলছে এই ইন্টারনেট যা কোনো কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নামমাত্র এই ফোরজি দিয়ে কোনো সেবাই মিলছে না। আবার কোনো কোনো এলাকায় এখনো পর্যন্ত এই নেটওয়ার্ক চালুই হয়নি। কিছু কিছু এলাকায় সোমবার সকালে কিছু গতি পাওয়া গেলেও সকাল ১০টার পর একদম ধীর হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের মতে, মোবাইল ফোনে ফোরজি ইন্টারনেটের গতি সাধারণত ৩০ এমবিপিএস (১ এমবিপিএস=১০২৪ কেবিপিএস) ও এর বেশি হয়ে থাকে।
ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফাস্ট ডট কম ব্যবহার করে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত বেশ কিছু মোবাইল ফোনে দেখা যায়, ফোরজি নেটওয়ার্কে ৩০ কেবিপিএস থেকে ৩ এমবিপিএস পর্যন্ত গতি পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মতে, এটি কোনোভাবেই ফোরজি মানের গতি নয়।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দ্য সফট কিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিফায়েত ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইল ফোনে নিত্য যে কাজ করি, সেগুলো করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এককথায় খুবই ধীর। সেভাবে কাজে দিচ্ছে না মোবাইলের ফোরজি ইন্টারনেট সেবা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশে ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়। ২৩ জুলাই রাতে দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। রোববার বেলা তিনটা থেকে মোবাইল ফোনে ফোরজি ইন্টারনেট চালু হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয় বোনাস হিসাবে ৫ গিগাবাইট ডেটা। তবে সোমবার দুপুর থেকে ফোরজি মোবাইল ইন্টারনেট ধীরগতিতে চলছে বলে রাজধানী ঢাকার অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন।
রাজধানীর মিরপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, রামপুরা, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি ঠিকই ছিল, তবে দুপুর থেকে গতি ধীর হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক ফোরজি দেখালেও কাক্সিক্ষত গতি পাওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের দুটি মোবাইল সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে মোবাইল ফোনে ফোরজি ইন্টারনেটের গতি সাধারণত ৩০ এমবিপিএস ও এর বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে গতি ৩০-৪০ কেবিপিএসও পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, মোবাইল সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফোরজির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইডথ (ইন্টারনেটের গতি) উš§ুক্ত রেখেছে। কারণ, তা না হলে গ্রাহকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলে ব্যান্ডউইডথ সীমিত করে রাখতে পারে। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহকদের জন্য ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করতেও বাধ্য থাকে মোবাইল অপারেটররা।
ম্যাক্স আইটির মাহবুব হাসান বলেন, ফোরজি ইন্টারনেট ধীরগতিতে চলছে। সেভাবে কাজে আসছে না। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দিয়েই মোবাইল চালাচ্ছি। মতিঝিলে কর্মরত একজন ব্যাংকার বলেন, ফোরজি সেভাবে কাজ করছে না। একটি ওয়েবপেজ খুলতেই অনেকক্ষণ সময় লাগছে।
আম্বার আইটির একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন সব ব্যবসা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। মোবাইল ডেটার জন্য সাধারণ মানুষ অনলাইন কেনাকাটা ও নানা ধরনের অনলাইন সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না। মোবাইল ব্যাংকিং/অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক তাদের ফোরজি নেটওয়ার্ক সচল করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ঘোষণা অনুযায়ী, গ্রাহকদের ৫ জিবি ডেটা বোনাস দেয়ার বিষয়েও কাজ করছে অপারেটররা। বাংলালিংক ইতোমধ্যে তাদের গ্রাহকদের এই ডেটা দিয়ে দিয়েছে। তাদের গ্রাহকরা নেটওয়ার্ক চালুর সঙ্গে সঙ্গেই এই ডেটা পাবেন বলে জানায় অপারেটরটি। গ্রামীণফোন জানায়, তাদের গ্রাহকরা এই ডেটা পাওয়ার বিষয়ে এসএমএসর মাধ্যমে জানতে পারবেন। আর রবি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বলে জানায়।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ২৮ জুলাই ফেসবুক, টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সহিংসতার কনটেন্টগুলোর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। জবাব দেওয়ার জন্য তাদের ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। পলক বলেন, তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হলে পরে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়া হবে।