প্রতীকী ছবি
সহজ হয়েছে জমি নামজারির নিয়ম। ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে সারা দেশে একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। এখন আর ভূমি অফিসে সময় অপচয় করা লাগে না সেবা গ্রহণকারীদের।
বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি ৬১ জেলার সব উপজেলা ভূমি ও সার্কেল অফিস এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু রয়েছে। অনলাইনে আবেদনের সময় ১ হাজার ১৭০ টাকা অনলাইন পেমেন্ট করলেই ২৮ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করা যায়। এ জন্য আগে গড়ে ৭৭ দিন সময় লাগলেও এ বছর থেকে মাত্র ২৮ দিনেই নামজারি করা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সময় আরও কমবে।
নামজারি যেভাবে করবেন
উত্তরাধিকার, ক্রয়সূত্রে বা অন্য কোনো উপায়ে জমির কোনো মালিক নতুন হলে তার নাম খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারি বলে। উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানার ক্ষেত্রে আপস বণ্টননামা করে নিজ নামে জমির খতিয়ান করে রাখা প্রয়োজন।
ই-নামজারি করতে হলে ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এরপর ই-নামজারি আইকনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হবে। আবেদন ফি বাবদ ৭০ টাকা (কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা) অনলাইনে (একপে, উপায়, রকেট, বিকাশ, নগদ, ব্যাংকের কার্ড) পরিশোধ করতে হবে।
নামজারির হালনাগাদ তথ্য মুঠোফোনে বার্তার মাধ্যমে জানা যাবে। অনলাইনে শুনানি করতে চাইলে ওয়েবসাইটে অনুরোধ জানাতে পারবেন। আবেদন অনুমোদিত হলে নাগরিক ডিসিআর ফি ১ হাজার ১০০ টাকা জমা দিলেই নির্দিষ্ট মুঠোফোন নম্বরে বার্তা আসবে। এরপর নিজেই থেকে অনলাইন ডিসিআর এবং নামজারি খতিয়ান সংগ্রহ করতে পারবেন।
ই নামজারি আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে ই নামজারি আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রথমে ভিজিট করতে হবে Mutation Land Gov BD ওয়েবসাইট এবং এখান থেকে নামজারি আবেদন লিংকে ক্লিক করতে হবে।
প্রথম ধাপ: ঘোষণা
আবেদন অপশনে গেলে একটি পূর্ণাঙ্গভাবে নামজারি আবেদন ফরম চলে আসবে। এখানে আপনাকে সঠিকভাবে এবং নির্ভুলভাবে জমি সংক্রান্ত এবং মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। এবং কোর্ট ও নোটিশ ফি বাবদ ৫০ ও ২০ টাকা মোট ৭০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।
এই ফর্মটি আপনাকে পূরণ করতে হবে এবং যে সমস্ত তথ্য দিতে হবে তা হলো –
নামজারির উৎস অর্থাৎ আপনি জমিটি কোন সূত্রে পেয়েছেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে ( এখানে ক্রয়, ওয়ারিশ, হেবা, ডিক্রি, নিলাম, বন্দোবস্ত, অন্যান্য )। যদি আপনি জমিটি ক্রয় সূত্রে পেয়ে থাকেন এক্ষেত্রে ক্রয় সিলেক্ট করার পরবর্তীতে পেইজে আপনার সামনে আরো কতগুলো অপশন চালু হবে,
নামজারি আবেদনকৃত জমির ঠিকানা অর্থাৎ প্রথমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, এবং মৌজা সিলেক্ট করতে হবে। মৌজার ক্ষেত্রে অবশ্যই জেএল নম্বরটি মনে রাখতে হবে, আপনার জমিতে যদি একাধিক মৌজায় বিদ্যমান থাকে তাহলে প্রত্যেকটি মৌজা আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এরপরে জমি জরিপের ধরন নির্বাচন করতে হবে – এখানে আপনাকে আপনার এলাকার জন্য এসএ/এমআরএস, আরএস/বিএস, মহানগর, দিয়ারা, সিএস যা প্রযোজ্য জরিপটি সিলেক্ট করতে হবে। সবশেষে পরবর্তী ক্লিক করতে হবে
দ্বিতীয় ধাপ: জমির তফসিল ও গ্রহীতার তথ্য প্রদান
পূর্ব পেইজে দেওয়া আপনার এনআইডি অনুযায়ী তথ্য এই পেইজে যাচাই করা হবে, কোন তথ্য ভুল থাকলে সেটি সংশোধন করে নিতে হবে, এরপরে গ্রহীতার তথ্য তার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী দেখতে পাবেন। অধিকতার হিসাবে শুধু গ্রহীতার স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে এই পেইজে।
জমির যদি এক বা একাধিক গ্রহীতা থাকে সে ক্ষেত্রে একাধিকগ্রহিত তার তথ্য আলাদা আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে।এখানে জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ , খতিয়ানে উক্ত দাগে জমির পরিমাণ টাইপ করে দিতে হবে। অনুরূপ ভাবে একই খতিয়ান থেকে বা একই মৌজাভুক্ত একাধিক খতিয়ান থেকে আরও দাগে আরো জমি এই নামজারির সাথে যুক্ত করতে হলে সেক্ষেত্রে “আরও খতিয়ান সংযুক্ত করুন” ও “আরও দাগ সংযুক্ত করুন” চেপে আরও খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ , খতিয়ানে উক্ত দাগে জমির পরিমাণ ইত্যাদি টাইপ করে দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ: দাতার তথ্য সংযুক্তি
এখানে যে ব্যক্তির থেকে আপনি জমি গ্রহণ করবেন সেই ব্যক্তিগত তথ্য যেমন এন আই ডি নাম্বার, হোল্ডিং ট্যাক্স নাম্বার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং ছবি, ঠিকানা ও জমির পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
এর পরে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন ডকুমেন্ট আপনাকে সংযুক্ত করতে হবে যেমন:
জমির মূল দলিলের স্ক্যান কপি
খতিয়ানের স্ক্যান কপি
জমীর চৌহদ্দিসহ হাত নকশা
অনন্য
প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার পরে আবেদনটি দাখিল করতে হবে, এই পেইজে আপনাকে আপনার নামজারি আবেদন নাম্বার সহ বিস্তারিত তথ্য প্রিভিউ দেখানো হবে। সুবিধার্থে আপনি পেজটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন, পরবর্তীতে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে আবেদন নম্বরটি সংরক্ষণ করুন।
মনে রাখবেন একবার আবেদন দাখিল হয়ে গেলে সেটা সংশোধন করার কোন সুযোগ নেই, এজন্য প্রতিটা ধাপ পূরণ করার সময় বারবার তথ্যগুলো সঠিকভাবে যাচাই করে নিবেন।
চতুর্থ ধাপ: ফি প্রদান
আবেদনটি দাখিল হয়ে গেলে এই ধাপে আপনাকে দুটি ফি , প্রদান করতে হবে প্রথমটি হলো কোর্ট ফি এবং দ্বিতীয়টি হল নোটিশ ফি, ৫০ ও ২০ টাকা ক্রমের মোট ৭০ টাকা আপনাকে প্রদান করতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
নামজারির জন্য শুনানি
নামজারি আবেদনের টাকা পরিশোধ করার শেষে আপনি অনলাইন শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে চান কিনা এটি জানতে চাওয়া হবে, অনলাইন শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে হলে ” হ্যাঁ “ বাটনে প্রেস করতে হবে অথবা http://oh.lams.gov.bd লিঙ্কে গিয়ে অনুরোধ জানাতে হবে। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন এবং অনলাইন শুনানির জন্য একটি লিংক আবেদনে প্রদত্ত মোবাইলে পাঠাবেন। শুনানির পূর্বে খসড়া খতিয়ানটি নাগরিক কর্নার হতে দেখা যাবে। খসড়া খতিয়ানে কোন তথ্য ভুল থাকলে শুনানির সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে অবগত করবেন।
ক্রয়, উত্তরাধিকার বা হেবা সূত্রে যিনি জমির নতুন মালিক হয়েছেন এবং নামজারির আবেদন করেছেন তাকে এবং এই জমির পূর্ববর্তী মালিককে শুনানির জন্য ডাকা হয়। তবে পূর্ববর্তী মালিক মৃত হলে বর্তমান মালিককে শুনানিতে থাকতে হয়। এই শুনানি জমির মালিকার সত্যতা যাচাইয়ে কিংবা কারও কোনো অভিযোগ থাকলে সেগুলো ফয়সালা হয়ে থাকে।
অনিয়ম হলে
ই-নামজারি বিষয়ে যেকোনো অনিয়ম হলে কল সেন্টারে (১৬১২২) ফোন করে এবং ঠিকানার ওয়েবসাইটে অভিযোগ করা যাবে।