Logo
Logo
×

জাতীয়

৯ দিন ধরে বন্ধ, ট্রেন চালুর বিষয়ে যা জানালেন রেলমন্ত্রী

Icon

শিপন হাবিব

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:২০ এএম

৯ দিন ধরে বন্ধ, ট্রেন চালুর বিষয়ে যা জানালেন রেলমন্ত্রী

ফাইল ছবি

কবে ট্রেন পরিচালনা স্বাভাবিক হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দেশ এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। কারফিউ চলছে, আবার কারফিউ শিথিলও হচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকারি এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলছে। সড়কে যানবাহন চলছে। কিন্তু, সাধারণ মানুষের অন্যতম বাহন ট্রেন চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে।

কারফিউ আরও শিথিল

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৮ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলা ট্রেনগুলোও। এমন অবস্থায় প্রতিদিন ৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনছে রেল। বৃহস্পতিবার কম দূরত্বের মধ্যে কয়েকটি ট্রেন চালানোর মৌখিক নির্দেশনা থাকলেও কারফিউ চলা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমন অবস্থায় রেলওয়ের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ যাত্রীরা। যাত্রীদের প্রত্যাশা, দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রেন পরিচালনা করবে সরকার।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকালে রেলপথমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম যুগান্তরকে বলেন, ‘ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত জনবল পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ট্রেন চালানো হবে। আমাদের কাছে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা ও রেল সম্পদ রক্ষা সবচেয়ে জরুরি। জামায়াত, শিবির এবং বিএনপির নাশকতাকারীরা ওতপেতে আছে। রেলে সহিংসতা ঘটিয়েছে তারা। মামলা হয়েছে, এক এক করে সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কাবস্থানে আছে। পুনরায় রেলে সহিংসতা ঘটালে নাশকতাকারীদের চরম মূল্য দিতে হবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ-বাস্তবায়ন করছে। দেশবিরোধীরা তা সহ্য করতে পারছে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে রেলে কোচ, ইঞ্জিনসহ বহু স্টেশন ভাঙচুর করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের যা যা করণীয় তা করব।’

এদিকে ৮ দিন ট্রেন পরিচালনা বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সীমিত আকারে কম দূরত্বের মধ্যে কয়েকটি ট্রেন পরিচালনার কথা ছিল রেলের। কিন্তু, ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের একজন জানান, কারফিউ অবস্থায় ট্রেন পরিচালনা সম্ভব নয়। শিথিল সময়ের মধ্যে ট্রেন পরিচালনা ঝুঁকির। তাছাড়া শিথিল সময়ে ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করে ট্রেন চালানো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। কমলাপুর স্টেশনে দায়িত্বরত রেলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, শিথিল সময়ে ট্রেন পরিচালনা করা হলে সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া শিথিল সময় ধরে যাত্রী উঠানো-নামানোও সম্ভব হবে না। ট্রেন চলে নীরব-জনমানববিহীন এলাকাজুড়ে। লাইনে আগুন কিংবা গুটিকয়েক লোক লাইন অবরোধ করলে ট্রেন চালানো সম্ভব হয় না।

এদিকে ১০৬টি আন্তঃনগরসহ ৩৫৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং দুই জোড়া আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা লোকসান গুনছে রেল। মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেসসহ আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীদের টিকিটের সমপরিমাণ মূল্য ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টিকিট ফেরতের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হবে। ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির যুগান্তরকে বলেন, মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিট ১ মাস আগ থেকেই কাটা হয়। আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় ১০ দিন আগ থেকে। অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীদের টিকিট মূল্য ফেরত দেওয়া হবে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে চলাচলরত আন্তঃদেশীয় মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম কাটা টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল। ১৮ জুলাই থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রেন যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় রেল। বুধ ও বৃহস্পতিবার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কিছু যাত্রী স্টেশনে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী যাত্রী আওয়াল হোসেন বলেন, ‘মিডিয়ায় জানতে পেরেছিলেন বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রুটে কমিউটার, মেইল ও লোকাল ট্রেন চলাচল করবে। এসে দেখি ট্রেন চালানোর কোনো লক্ষণই নেই। আমার মতো অনেক যাত্রী স্টেশনে এসেছিলেন। স্টেশনের মেইন গেটে তালা ঝুলছিল। কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, বহু যাত্রী ভুল করে কমলাপুর স্টেশনে আসছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন কবে থেকে ট্রেন চলাচল করবে। আমরা সঠিক উত্তর দিতে পারছি না। শামীম নামের এক যাত্রীর ভাষ্য, সড়কে যান চললে, ট্রেন কেন চালানো যাচ্ছে না। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা ট্রেন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ট্রেন বন্ধ প্রায় ৯ দিন ধরে।

ঢাকা রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘ইতঃপূর্বে রেলে ট্রেন, স্টেশন ভাঙচুরসহ নাশকতা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মামলা হয়েছে, আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা এখন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে আছি। এমন অবস্থায় ট্রেন পরিচালনা করতে হলে রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জেলার (যেসব জেলাজুড়ে ট্রেন চলে) পুলিশ, ডিসিসহ প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জেলা পুলিশ, র‌্যাব এবং মাঠে থাকা সেনাবাহিনীর সমন্বয়েই ট্রেন পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, ‘ট্রেন সাধারণ মানুষের বাহন-এ ক্ষেত্রে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করতে সাধারণ মানুষ সোচ্চার হবে। সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসবে। যোগ করেন রেল পুলিশের এ কর্মকর্তা।

রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম কম দূরত্বের মধ্যে চলা ট্রেনগুলোর কয়েকটি পরিচালনা করতে। বৃহস্পতিবার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, নিরাপত্তা এবং কারফিউর কারণে তা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ট্রেন পরিচালনা শুরু হবে। আমাদের লোকবল প্রস্তুত রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম