চলতি বছর পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব নিয়ে একাধিক হজযাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি হজ এজেন্সি মাবরুর ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে। এই এজেন্সির মালিক মাওলানা মোহাম্মদ জাকির হোসাইন। তিনি ‘এ’ গ্রেডের হজ প্যাকেজে পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা-খাওয়া ও ‘এ’ গ্রেডের তাঁবুর ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্র“তি দিয়ে ১৩ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরব নিয়ে যান। কিন্তু তিনি ঢাকায় হজযাত্রীদের দেওয়া প্রতিশ্র“তি মক্কায় গিয়ে রক্ষা করেননি। এসব হজযাত্রী ২৪ জুন দেশে ফেরেন। বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে এসব ঘটনার বিবরণ দিয়ে অভিযোগও করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, মাবরুর ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মাওলানা মোহাম্মদ জাকির হোসাইন ‘এ’ গ্রেডের হজ প্যাকেজের কথা বলে হজযাত্রীদের প্রতিশ্রুতি দেন। ‘এ’ গ্রেডের এই প্যাকেজে হজযাত্রীদের কাছ থেকে তিনি সাড়ে ১১ লাখ করে টাকা নেন। এ সময় তিনি বলেছেন, সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে ৫০ হাজার টাকা কম নেব এবং সরকারের চেয়ে উন্নতমানের সেবা দেব।
এছাড়া মক্কা ও মদিনায় পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা-খাওয়া এবং মিনা-আরাফায় ‘এ’ গ্রেডের তাঁবুর ব্যবস্থা করা হবে। সৌদি আরব যাওয়ার পর পদে পদে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন মাওলানা জাকির। মক্কায় জমজম টাওয়ারে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও রাখেন তার পেছনে ইলাপ কিন্দায়। আর মদিনায় রাখলেন নুসক আল মদিনায়। এসব হোটেলে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্টসহ বেশ কিছু সার্ভিস সুবিধা থেকে হজযাত্রীদের বঞ্চিত করেন। এছাড়া মদিনা থেকে আসার পর মসজিদুল হারাম থেকে ৬০০-৭০০ মিটারের মধ্যে হোটেলে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি রেখেছেন আজিজিয়ার শেষ প্রান্তে বলদিয়া অফিসের কাছে একটি ভাড়া বাসায়। যেখানে সার্ভিসের কোনো বালাই ছিল না। এক বিছনা চাদরে থাকতে হয়েছে প্রায় ১২ দিনের মতো। বাথরুম ছিল খুবই নিুমানের। একদিন তো তিনি হাজিদেরকে এক বেলা খাবার দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মিনা ও আরাফায় ‘এ’ গ্রেডের তাঁবুর কথা বলে রাখা হয়েছে ‘ডি’ গ্রেডে গাদাগাদি করে। এ সময় অতিরিক্ত গরম ও অব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, হজের প্যাকেজ অনুযায়ী সেবা দিতে ব্যর্থ হলে ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাবরুর ট্রাভেলসের এজেন্সি মালিক মাওলানা জাকির যুগান্তরকে বলেন, হজযাত্রীদের আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হজযাত্রীরা ‘এ’ গ্রেডের তাঁবু নিতে চাইলে আরও বেশি টাকা দিতে হতো।
জানা যায়, এই এজেন্সির পক্ষ থেকে এবার ৮০ জনের বেশি হজ করেন। সেখানে বিভিন্ন গ্রেডের হজযাত্রী ছিলেন। তবে ‘এ’ গ্রেডের হজযাত্রী ছিলেন ১৩ জন। তারা টাকা দিয়েছেন ‘এ’ গ্রেডের কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্ভিস পেয়েছেন ‘ডি’ গ্রেডের। চতুর এই জাকির অনেকের কাছ থেকে সাড়ে ছয় লাখ, কারো কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ এবং কারও কাছ থেকে আট লাখ টাকা নিয়ে ‘এ’ গ্রেডের হাজিদের সঙ্গে একই হোটেলে একই তাঁবুতে রেখেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাওলানা জাকির কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ভুক্তভোগী হজযাত্রীরা অভিযোগ করলে তিনি ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এ নিয়ে সৌদি আরবেই হজযাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি কৌশলে তাদের শান্ত করেন।
মাবরুর ট্রাভেলসের হাজিরা গত ১২ মে থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা করেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ‘এ’ গ্রেডের হজযাত্রী আজিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা সৌদি আরব গিয়ে ইবাদতে মশুগুল থাকার জন্য বেশি টাকা দিয়ে হজে গেছি। কিন্তু আমরা সে অনুযায়ী সেবা পাইনি। মাওলানা জাকির পদে পদে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছেন। যাদের কাছ থেকে তিনি সাড়ে ছয় লাখ টাকা নিয়ে ‘এ’ গ্রেডের হাজির কাতারে আমাদের সঙ্গে রাখলেন তাদেরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তারাও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন। যাদের কাছে সাড়ে ছয় লাখ নিয়ে ‘এ’ গ্রেডের হাজি হিসাবে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ আরও বেশি। মূলত তিনি কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে দেশে আসার পর আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি। এসব প্রতারণার বিচার হওয়া উচিত। আগামীতে কোনো হজযাত্রী যাতে এমন প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য এই ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।